সম্যক খান, মেদিনীপুর: সমাজসেবা তাঁর রক্তে। তা সে নারীশিক্ষার প্রসারই হোক বা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। সবকিছুতেই সামনের সারিতে থেকেছেন গড়বেতার ফতেসিংপুরের বাসিন্দা সুভাষ চট্টোপাধ্যায়। আর্থিক সহযোগিতা করে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়েছেন এলাকার অনেক গরিব কন্যাকে।তাই নিজের ছেলের বিয়ের মতো পারিবারিক অনুষ্ঠানেও তিনি প্রচারে তুলে এনেছেন কন্যাশ্রী, মিশন নির্মল বাংলা, রক্তদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে। শনিবারই প্রীতিভোজের আসরে তিনি যে মেনু ছাপিয়েছেন তাতে জ্বলজ্বল করছে এইসব সরকারি প্রকল্পের নাম।
[কৃত্রিম পায়ে বাইক চালিয়ে নেপাল-সিকিম, বিশ্বজয়ের লক্ষ্যে বিপিন]
সরকারি প্রকল্প প্রচার করার দায়িত্ব প্রশাসনের। এই ভাবনায় আটকে না থেকে সমাজসচেতন নাগরিক হিসেবে এগিয়ে এসেছেন সুভাষবাবু। গড়বেতারই ব্যানার্জিডাঙা হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক তিনি। ২০০৭ সালে অবসর নিয়েছেন। ছাত্রছাত্রী ও স্কুলের সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে উঠেছিলেন যে দীর্ঘ ৩৬ বছরের চাকুরীজীবনে তিনি একদিনের জন্যও ছুটি নেননি। শারিরিক অসুস্থতা থেকে শুরু করে অন্য সব প্রতিবন্ধকতাকেও সবসময় পেছনের সারিতে রেখে হাজির হয়েছেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সামনে। আবার শুধু শিক্ষাদানই নয়, সমাজের কথা ভেবে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আক্রান্ত মানুষদের সাহায্যার্থে। শ্যামা সেবায়তনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের হয়ে রক্ত জোগাড় থেকে শুরু করে সচেতনতায় নিজেকে সঁপে দেন। সেই সুভাষবাবুই এবার তাঁর ছোট ছেলের বিয়েতে এনেছেন অভিনবত্ব। গত বৃহস্পতিবার তাঁর ছোট ছেলে অভীকের বিয়ে দেন গোয়ালতোড়ের পিয়াশালাতে। এদিন বউভাত তথা প্রীতিভোজের আসর বসে। সেখানেই খাবারের তালিকা সম্বলিত যে কার্ড করা হয়েছে সেখানে ‘রক্ত দিন প্রাণ বাঁচান’, ‘নির্মল বাংলা – আমাদের অঙ্গিকার’, ‘কন্যাশ্রী- আমাদের ভবিষ্যৎ’ ইত্যাদি সরকারি প্রকল্পের প্রচার করছেন। এর আগে বড় ছেলে অনির্বাণের বিয়ে দেন ২০০৮ সালে। তখনও থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা উপহার দিয়েছিলেন অতিথি অভ্যাগতদের।
[বাজারে গিয়ে রংচঙে মাছ পছন্দ? আপনিই কিন্তু জালে পড়ছেন!]
সুভাষবাবুর এধরনের একের পর এক অভিনবত্বে মুগ্ধ অতিথিরা। আর এই মাস্টারমশাইয়ের কথায়, প্রীতিভোজে উপস্থিত অতিথিদের সামাজিক ভাবে সচেতন করতেই এই ছোট উদ্যোগ। হয়তো সরকারি প্রচারের কাছে এটা কিছুই নয়। কিন্তু নিজের অন্তরের তাগিদটা অনুভব করি। তাঁর সংযোজন, ‘‘গ্রামের গরিব মেয়েদের নাবালক অবস্থাতেই বিয়ে হয়ে যায়। তারপরও থাকে গার্হস্থ্য অত্যাচার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেনাপাওনা’ আমার মনকে খুব নাড়া দেয়। তাই যখন কন্যাশ্রীর মাধ্যমে এরাজ্যের কন্যাসন্তানগুলোকে বাঁচানোর প্রয়াস চলছে তখন নিজেকেও গর্বিত মনে হয়।’’ সুভাষবাবুর এই সমাজ সচেতনতার উদ্যোগে খুশি পরিবারের সদস্যরাও। নবদম্পতি অভীক ও নম্রতার কথায়, ‘ বাবার প্রতিটি কাজেই আলাদা একটা অনুভূতি আছে। যা খুবই প্রশংসনীয়। পুরো পরিবারই বাবার পাশে আছে।’ যাঁরা খেতে বসেছিলেন তাদের মটন, মিষ্টি বা আইসিক্রম নয়, বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল সামাজিক বার্তার দিকেই।
ছবি: নিতাই রক্ষিত