শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে এবার সামনে চলে এল অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হরিদয়াল রায়ের বসার ঘরের পাশে তালাবন্দি একটি রহস্যজনক ঘর। অনেকেরই অভিযোগ, কার্যত প্রশ্ন ফাঁসের ‘কন্ট্রোল রুম’ ছিল ওই ঘরটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একটা অংশ জানিয়েছেন, ওই ‘অ্যান্টি চেম্বার’ থেকেই নিয়ন্ত্রিত হত প্রশ্ন ফাঁস থেকে শুরু করে উত্তরপত্র তৈরির কাজ। আরও বিস্ফোরক অভিযোগ, শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নই নয়, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র একইভাবে ফাঁস করে উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীর কাছে পোঁছে দেওয়ার যাবতীয় কর্মকাণ্ড চলত ওই ঘর থেকেই। আপার প্রাইমারিতে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার সময়ও একই ঘটনা ঘটেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই পরীক্ষার্থী দাবি করেছেন। যদিও স্কুলের শিক্ষকরা এই বিষয়ে স্পিকটি নট। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি নিখিল অধিকারী বলেন, “এখন অনেক কথাই শুনছি। এতদিন জানতাম না। প্রশাসনিক তদন্তে নিশ্চয়ই সবই উঠে আসবে।”
[প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর]
কীভাবে চলত অপারেশন? বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন সকাল সাড়ে দশটায় মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র পৌঁছে যেত স্কুলে। অভিযোগ, সেই সুযোগে প্যাকেট খুলে পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই বের করে আনা হত প্রশ্ন। সেটি গোপনে অন্য ঘরে চলে যেত। সেখানে উত্তর লেখা হত। এরপর তা পাঠানো হত স্কুলের নির্বাচিত পরীক্ষার্থীদের কাছে। অঙ্ক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের উত্তর এক বাড়িতে বসে লেখা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তা অস্বীকর করে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, ক্লাসে মেধাবী বলে পরিচিত এক ছাত্রের দাবি, “এমন ঘটনার কথা তার জানা নেই।”
[পর্ষদের নিয়ম ভেঙে দেড় ঘণ্টা আগে মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র খুলে ফেললেন প্রধান শিক্ষক!]
এদিকে প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডের ঢেউ আছড়ে পড়েছে ময়নাগুড়ির সুভাষনগর হাই স্কুলের পড়ুয়াদের উপস্থিতিতেও। থমথমে পরিবেশ। এক ধাক্কায় শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা হতে শুরু করেছে। ভয়ে অর্ধেকের বেশি পড়ুয়া স্কুলমুখী হয়নি এদিন। শিক্ষকদের একাংশ কোনওমতে ক্লাস শেষ করে বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছেন। তবে ক্লাসে গেলেও পড়াশোনা যে কিছুই হচ্ছে না অস্বীকার করছেন না অনেকেই। এক শিক্ষক বলেন, “ছেলেমেয়েরা ক্লাসে থাকতে চাইছে না। এভাবে স্কুল চলে!” যদিও উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃহস্পতিবার শিক্ষকরা আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু চেষ্টা করেও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।