বাবুল হক, মালদহ: মাত্র একটা গরু নদীর ওপারে পৌঁছে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে। পকেটে ঢুকে যাবে নগদ পাঁচ হাজার টাকা। বিএসএফের নজর এড়িয়ে কাজটি সারলে হাতে উঠে আসবে কড়কড়ে নোট। সহজে টাকা রোজগারের লোভ সামলাতে পারছে না সীমান্ত গ্রামের স্কুল পড়ুয়ারা। গরু পাচারের কাজে তারা সরাসরি জড়িয়ে পড়ছে। মালদহের হবিবপুরের আইহো-ঋষিপুর সীমান্তের সংঘর্ষের ঘটনায় তা প্রকাশ্যে চলে এল।
[বিনোদন পার্কে ঝিলে ডুবে মৃত্যু ছাত্রের, নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগ]
গরু পাচারের হাত পাকিয়েছে ছাত্ররা! এই ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসনেও। পাচারের জন্য পড়ুয়াদের যেভাবে ব্যবহার হচ্ছে তাতে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হচ্ছে। যদিও মালদহ জেলা পুলিশের কর্তারা বিষয়টি নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাননি। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) দীপক সরকার বলেন, “বিএসএফ থেকে এখনও রিপোর্ট মেলেনি। তবু পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।” ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী হবিবপুরের ঋষিপুরে গরু পাচারকারীদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অশান্তির খবর পেয়ে বিএসএফ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে দুই স্কুল ছাত্রকেও জখম অবস্থায় উদ্ধার করেন টহলরত জওয়ানরা। বিএসএফের দাবি, ওই দুই স্কুল পড়ুয়াও বাংলাদেশে গরু পাচার করছিল। দুষ্কৃতী মারামারি করছিল। সেই সুযোগে কয়েকজন মহানন্দা নদীর জলে গরু ভাসিয়ে ওপারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। ৫ হাজার টাকার জন্য গুলি খেয়েও দুজন পাচারের চেষ্টা করেছিল। জওয়ানরা রাজু সরকার (১৬) ও মোহন দাস (১৪)-কে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। রাজুর পিঠে গুলি লেগেছে। বিএসএফ সূত্রে খবর, ওই ছাত্ররা গরু পাচারে যুক্ত। রাজু ঋষিপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। মোহন একই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
[সন্তানদের দুর্ব্যবহার, একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেও অবাক রক্ষা প্রৌঢ়ার]
কীভাবে তারা ভোর রাতে জল-সীমান্তে পৌঁছে গেল? রহস্য ফাঁস করলেন রাজুর বাবা। পেশায় দিনমজুর বীরেন সরকার জানান, তাঁর ছেলে কিছুদিন ধরে মাঝরাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। আর সকালে বাড়ি ফিরে আসত। না থাকার বিষয়ে সে বলত বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিল। বিএসএফের থেকে খবর পেয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ ছেলেকে দেখতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। বীরেন সরকার কার্যত মেনে নেন অভাবের সংসারে ৫ হাজার টাকার লোভে রাজু এই কাজ করেছে। ছেলেকে অন্ধকার পথ থেকে তিনি ফিরিয়ে আনতে চান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.