সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তোলাবাজির অভিযোগ জানাতে পাড়ুই থেকে এক কৃষক এসেছিলেন নবান্নে৷ রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশে যা বেশ চমকপ্রদ ঘটনা৷ স্থানীয় নেতাদের প্রতি বিশ্বাস নেই তাঁর, বিশ্বাস নেই পুলিশকেও৷ ভরসা একজনকেই৷ তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গত নির্বাচনে এই একজনের উপর ভরসা রেখেই বাংলার মানুষ তাঁদের রায় দিয়েছিলেন৷ সে ভরসার মান রেখে মুখ্যমন্ত্রীত্বের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রশাসনকে স্বচ্ছ রাখতে কঠোর হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তোলাবাজি, সিন্ডিকেট রুখতে কোনও দলীয় রং যে দেখা হবে না, তা বিগত কয়েকদিনে তাঁর সরকারের কাজকর্মেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ তাই ভরসা পেয়ে দলীয় জুলুমের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষ৷ প্রত্যাশা ছিল, একুশে সমাবেশের মঞ্চ থেকেই সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে দলকে কড়া বার্তা দেবেন তিনি৷ কিন্তু দেখা গেল সিন্ডিকেটের কথা একুশের মঞ্চে মুখেও আনলেন না দলনেত্রী৷
(২১ জুলাই : LIVE)
তোলাবাজির অভিযোগে নিউটাউনের তৃণমূল কাউন্সিলর গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের শিক্ষিত জনমানসে বদলাতে শুরু করেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতার ভাবমূর্তি৷ তোলবাজি, সিন্ডিকেট ঠেকাতে জেলায় জেলায় পুলিশি অভিযান চালাতেই গ্রেফতার হয়েছে বহু দুষ্কৃতী৷ বিভিন্ন মহলে বলাবলি শুরু হয়েছিল, জনমোহিনী রাজনীতির ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে প্রশাসক মমতার ব্যাপ্তি অনেকটাই দেখা যাচ্ছে এখন৷ বস্তুত সবুজসাথীর সাফল্য বা দু’টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার নীতি তাঁকে গ্রাম-মফস্বলে যে জনসমর্থনের ভিত্তি দিয়েছে, শহরাঞ্চলে সে ভিত্তি বেশ নড়বড়ে৷ ভোটের অঙ্ক যাই বলুক না কেন, তথাকথিত শহুরে শিক্ষিত জনতা যেন প্রশাসক মমতাকে এখনও ততটা নম্বর দিতে রাজি নন৷ কিন্তু গত কয়েকদিনের ঘটনাক্রমে বদলাচ্ছিল ছবিটা৷ যে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে পুলিশকে পঙ্গু করে রাখার অভিযোগ তুলেছিল নির্বাচন কমিশন, এমনকী পুলিশ শিরদাঁড়া ফেরত পেলে প্রশাসনের চাপে পড়বে যে কানাঘুষো প্রচলিত আছে প্রশাসনের অন্দরে, সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে তা একরকম ভুলই প্রমাণ করছিলেন তিনি৷ স্বমহিমায় দেখা যাচ্ছে রাজ্য পুলিশকে৷ কোনওরকম অন্যায় যে বরদাস্ত হবে না বিধাননগর ও সোনারপুরের কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করেই তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ দলের থেকেও রাজ্যের স্বার্থ যে অনেক বড় তা প্রতি পদে পদে জানিয়ে দিচ্ছিলেন৷ বস্তুত তিনি নিজেও জানেন, শুধু দু’টাকা কেজি দরের চাল বা ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্পে এবার অন্তত চিড়ে ভিজবে না৷ দ্বিতীয় দফায় তাঁকে টিকে থাকতে গেলে সব স্তরের মানুষের সমর্থন জরুরি৷ দ্বিতীয়ত, দলে গোষ্ঠীকোন্দল যেভাবে বাড়ছে তা অঙ্কুরে বিনাশ না করলে আগামী দিনে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে তৃণমূল দলটিই৷ সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন আদায় করতেই তাই কঠোর প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আশা করা গিয়েছিল, শহিদ দিবস তথা বিজয় দিবসের মঞ্চ থেকেই দলকে সেই বার্তাও দেবেন৷
(২১-এর সমাবেশে মদন স্মরণ কবীর সুমনের)
এদিন অবশ্য দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় কড়া বার্তা দিলেনও৷ তবে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে নীরবই থাকলেন৷ দলের সকলস্তরের কর্মীদের সম্মান দিয়ে দলের অভ্যন্তরে জমতে থাকা ক্ষোভ-বিক্ষোভ কৌশলে থামিয়ে দিলেন নেত্রী৷ সেই সঙ্গে নেতাদের বিলাস বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গও তুলে তাতে রাশ টানার ইঙ্গিত দিলেন৷ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তিনি পুরনো দিনের লড়াকু কর্মীদের ফেরত চান৷ বার্তা অবশ্যই একশ্রেণির তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে৷ সেই সঙ্গে পুরপ্রধান থেকে পঞ্চায়েত প্রধান এবং জেলা ও ব্লক স্তরের সব নেতাদের প্রশাসনের কাজে সাহায্য করা ও পার্টি গাইডলাইন মেনে চলারও বার্তা দিলেন৷ কোনও বিভেদ, বিভাজনের রাজনীতি ও প্ররোচনায় পা না দিতে নির্দেশ দিলেন৷ দলের শৃঙ্খলা রক্ষার যে বার্তা দেওয়ার কথা ছিল তা দিলেও, স্পষ্ট করে বললেন না সিন্ডিকেট নিয়ে তাঁর মনোভাবের কথা৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দলনেত্রী যদি এই মঞ্চ থেকে সরাসরি বার্তা দিতেন, সিন্ডিকেট ভাঙার ডাক দিতেন, তবে সব স্তরের কর্মীরা তা আর সঠিকভাবে মেনে চলতেন৷ কিন্তু এই প্রসঙ্গে তাঁর একদম নীরব থাকা বাড়িয়ে দিল জল্পনা৷ দলকে কড়া শাসনে রেখেও কেন সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে একটা শব্দও খরচ করলেন না তা রহস্যই থেকে গেল৷ তবে শহিদ দিবস পালনের মতো আবেগঘন মুহূর্তে দলের খারাপ দিকটি আর সামনে টেনে আনলেন না, এমনটাই মনে করছেন কেউ কেউ৷ তাই বোধহয় দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তিটিই তুলে ধরলেন রাজ্যের মানুষের সামনে৷ তবে কেউ কেউ বলছেন, এবার অন্তত দলের কালো দিকটি এড়িয়ে না গেলেই ভাল করতেন মমতা৷