Advertisement
Advertisement
খুন

বিয়ের দুই সপ্তাহ আগে নিজের বাড়িতেই নৃশংসভাবে খুন যুবক, বেপাত্তা দাদা-বউদি

সম্পত্তি বিবাদ না কি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জের, তদন্তে পুলিশ।

Man found dead at his residence, police suspects murder

ছবি: প্রতীকী

Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:May 12, 2019 9:49 am
  • Updated:May 12, 2019 9:49 am

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: কলতলায় পড়ে ক্ষতবিক্ষত দেহ। মাথা ফেটে চৌচিড়। শরীরের বিভিন্ন অংশেও আঘাতের চিহ্ন। উপুর হয়ে পড়ে ছটছট করতে করতে মারা গিয়েছে বোধহয়। তার চিহ্নও রয়েছে। কলতলা পুরো রক্তে ভেসে গিয়েছে। পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে ধাতব পাত বা রডজাতীয় বস্তু। রক্তে মাখামাখি। দেহের পাশে রয়েছে রক্তমাখা বাঁশ। কলতালা ছোট্ট একটা বাটিতেও চাপ চাপ রক্ত। একটি বাইক ও মোটরবাইকও উলটে পড়ে রয়েছে। বারান্দা ঘরের জিনিসপত্র, গ্যাস, সিলিন্ডারও উলটেপালটে পড়ে রয়েছে।

শনিবার নিজেদেরই বাড়িতে যুবকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোরগোল পড়েছে বর্ধমান শহরে। ঘটনাটি ঘটেছে শহরের কাঞ্চননগরের মন্তেশ্বরতলার লিচুবাগান এলাকায়। মৃতের নাম বিজয় পণ্ডিত (২৪)। সকালে দেহ উদ্ধারের আগে থেকেই বেপাত্তা বিজয়ের দাদা দিলীপ, বউদি নীলম ও দিলীপের আড়াই বছরের শিশুসন্তানও। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের সন্দেহের তির তাদের দিকেই। এদিকে মৃতের মা মালতী পণ্ডিতের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছে পুলিশ। তবে তাঁর কথাবার্তায় কিছু অসংলগ্নতা পেয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের মনে হয়েছে মালতীদেবী কিছু একটা চেপে যেতে চাইছেন।

Advertisement

খুনের মোটিভও এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। সপ্তাহ দুয়েক পরে বিজয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের পর বিজয় স্ত্রীকে নিয়ে লিচুবাগানের বাড়িতেই থাকবে, বাড়ি ভাগ হবে এই নিয়ে দুই ভাইয়ের একটা সমস্যা চলছিল কিছু দিন ধরে। এমনটাই মালতীদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন। সেই কারণেই খুন কি না তা অবশ্য তিনি বলতে পারেননি। আবার খুনের নৃশংসতা দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, ব্যক্তিগত আক্রোশ এমন পর্যায়ে না থাকলে এমনটা ঘটে না। সেক্ষেত্রে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে আততায়ীর মনে তীব্র আক্রোশ জমে থাকতে পারে। সম্পত্তি বিবাদে সেই আক্রোশটাকেই কাজে লাগিয়ে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করছেন তাঁরা। তবে আততায়ী একজনই না কি কয়েকজন ছিল সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

Advertisement

এদিন বর্ধমান থানায় দাঁড়িয়ে মালতীদেবী জানান, সর্বমঙ্গলা মন্দিরের কাছে ভাতছালা এলাকায় তাঁদের বাড়িতে ছোট ছেলেকে নিয়ে তিনি থাকতেন। তাঁর স্বামী লিচুবাগানে যে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন বড়ছেলে ও বউমা সেখানে থাকতেন। তাঁরা মাঝে মাঝে যেতেন। তাঁদের মৃৎশিল্পের কারবার রয়েছে। দুইভাই তা দেখাশোনা করত। তবে লিচুবাগানে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, তিনি মেয়ের বাড়িতে থাকতেন। এদিকে, পুলিশের কাছে মালতীদেবী জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলে তাঁর নাতি এসেছিল তাঁর কাছে। সন্ধ্যায় দিলীপ ছেলেকে নিতে আসেন। তখন বিজয়কে তিনি বলেন মোটরবাইকে করে দাদা ও ভাইপোকে পৌঁছে দিতে। তারা চলে যায়। রাত ৯টা নাগাদও বিজয় বাড়ি ফেরেনি। তখন তিনি লিচুবাগানের বাড়িতে যান। কিন্তু ডাকাডাকি করেও কারওর সাড়া পাননি তিনি। ফিরে আসেন। এদিন সকালে আবার যান। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে তখন প্রতিবেশীদের জানান। কয়েকজন ৮ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে দেখেন ছোট ছেলের দেহ পড়ে রয়েছে। বড় ছেলে সপরিবার বেপাত্তা। খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে। এদিন সকাল থেকে বেশ কয়েকদফায় পুলিশকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন তদন্তে। পুলিশের অনুমান, শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে খুনের ঘটনাটি ঘটেছে।

এদিন স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতেও তাঁরা ওই বাড়িতে চিৎকার চেঁচামেচি শুনেছেন। আগেও এই ধরণের ঝগড়া হত বলে তাঁরা গা করেননি। বিজয়দের আদি বাড়ি বিহারের আড়ায়। বিজয়ের বাবা বর্ধমানে এসে মৃৎশিল্পের কারবার খুলেছিলেন। মালতীদেবী বলেন, “বড়ছেলে-বউমাই এটা করেছে। না হলে ওরা পালাবে কেন।” পুলিশ দিলীপ-নীলমের খোঁজ শুরু করেছে। শনিবার রাত পর্যন্ত তাদের সন্ধান মেলেনি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ