ধীমান রায়, কাটোয়া: ননদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে। তারপর চায়ের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে তাঁকে ঘুম পাড়ানো হয়। ঘুমন্ত অবস্থায় ওই গৃহবধূকে ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে খুনের অভিযোগ উঠল স্বামী, ননদ-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে কাটোয়ার শ্রীবাটি গ্রামে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ওই বধূর নাম রহিমা বিবি। বয়স ২২ বছর। শুক্রবার বিকেলে তাঁকে শ্রীবাটি গ্রামে ননদের বাড়ি থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে। রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এদিকে স্ত্রীকে মেরে নিজের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে অভিযুক্ত স্বামী আমির শেখ। সে কাটোয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে তার আঘাত গুরুতর নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পুলিশি পাহারায় চিকিৎসা চলছে আমিরের। বাকি অভিযুক্তরা পলাতক। সন্দেহের বশেই রহিমাকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।
[ একই পরিবারের ৪ জনের রহস্যমৃত্যু, চাঞ্চল্য ছড়াল শিলিগুড়িতে ]
ভাতারের ভূমশোর গ্রামে বাপেরবাড়ি নিহত বধূর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূমশোর গ্রামের বাসিন্দা রহিম মল্লিকের পাঁচ মেয়ে। বড় মেয়ে রহিমার ২০১২ সালে বিয়ে হয়েছিল কাটোয়ার পানুহাট ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি আমির শেখের সঙ্গে। তাদের সাড়ে তিন বছরের একটি মেয়ে আছে। আমির ভিনরাজ্যেও কাজে যেত বলে তার পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। নিহত রহিমার মা আঙ্গুরা বিবি জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার পানুহাট থেকে শ্রীবাটি গ্রামে ননদ রিনা বিবির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রহিমাকে। শুক্রবারেও তার মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল আঙ্গুরা বিবির। আঙ্গুরা বিবি জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলে এক প্রতিবেশী ফোন করে খবর দেন রহিমাকে কোপানো হয়েছে।
ঘটনার খবর পেয়ে রহিমার বাপেরবাড়ির লোকজন কাটোয়া হাসপাতালে পৌঁছায়। রহিমার মাসি মনোয়ারা বেগম বলেন, রহিমার তখন প্রায় শেষ অবস্থা। হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর আগে সমস্ত ঘটনা বলে যান রহিমা। ননদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রহিমাকে ছুরি দিয়ে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তার আগে জোরে মোবাইলে গান বাজানো হচ্ছিল। প্রথমবার আঘাত করার পর রহিমা বাঁচার চেষ্টা করেন। তারপর রহিমা মারা গিয়েছে ভেবে শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
[ পরিত্যক্ত বাড়ির মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার গৃহবধূর পচাগলা দেহ, রায়দিঘিতে চাঞ্চল্য ]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রহিমাকে নৃশংসভাবে কোপানোর পর রিনা বিবি ও তাঁর পরিবারের লোকেরা তাকে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নামিয়ে দিয়েই তারা পালায়। তবে একই সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আমির শেখকেও। ঘটনার পর আমির আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে সে পুলিশের কাছে জানিয়েছে।
আমির কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। মাসতিনেক আগে সে বাড়ি আসে। বাড়ি ফেরার পর থেকে স্ত্রীর সঙ্গে তার অশান্তি চলছিল। স্ত্রী রহিমা ছিলেন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমিরের সন্দেহ কেরলে থাকা অবস্থাতেই তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। ওই সন্তান তাঁর ঔরসজাত নয়। সেই রাগেই তিনি স্ত্রীকে খুনের পরিকল্পনা করে বলে জেরায় জানিয়েছে আমির।
ছবি- জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.