সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ফের ‘মাওবাদী’ আতঙ্ক ফিরল পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে। রাতের অন্ধকারে বলরামপুরে পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্যার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। বাড়ির অদূরে মিলল মাওবাদী পোস্টার। যদিও পোস্টারের বয়ান নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিজেপি ও তৃণমূল। তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন:কীর্তনের অনুষ্ঠানে বিজেপি নেতার উপর গুলি, কাঠগড়ায় তৃণমূল]
একসময়ে পুরুলিয়ার বলরামপুরের ঘাটবেড়া-ঘেরুয়া পঞ্চায়েত এলাকা ছিল মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল। অযোধ্য পাহাড় লাগোয়া এই এলাকায় মাও সন্ত্রাসের বলি হতে হয়েছিল বহু সিপিএম, এমনকী তৃণমূলকে নেতাদেরও। সেই ঘাটবেড়া-ঘেরুয়া পঞ্চায়েতে তিলাই গ্রামে পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্যার বাড়ির অদূরে মিলল মাওবাদী পোস্টার। জানা গিয়েছে, তিলাই গ্রামে নামোপাড়ার একেবারেই শেষপ্রান্তে থাকেন মালতী রাজোয়াড়। তিনি বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্যা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার গভীর রাতে তাঁদের নজরে পড়ে, মালতীর বাড়ির খড়ের চালায় আগুন জ্বলছে। তড়িঘড়ি ওই বিজেপি নেত্রী ও তাঁর পরিবারের লোককে ঘুম থেকে তুলে বাড়ি থেকে বের করে আনা হয়। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প ও বলরামপুর থানায়। তবে শেষপর্যন্ত দমকল না আসায় স্থানীয় বাসিন্দারা বিজেপি নেত্রী মালতী রাজোয়াড়ের বাড়ির আগুন নিভিয়ে ফেলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে একশো মিটার দূরে মাটিতে ইট চাপা দেওয়া অবস্থায় বেশ কয়েকটি মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার পড়েছিল। পোস্টার লেখা ছিল, ‘২০০৭-০৮ সালে এলাকা যেমন ছিল, তেমনই দিন আসছে। অন্যায় কাজ করলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।’ ঘটনাটি জানাজানি হতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া আসনটি হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। বস্তুত, পঞ্চায়েত ভোটে বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতিতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিজেপিই। কিন্তু দল ভাঙিয়ে শেষপর্যন্ত পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রাখে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি বলরামপুর মণ্ডল সাধারণ সম্পাদক গোপাল কাটারুকার বক্তব্য, লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া কেন্দ্রে জিতেছেন গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী। আর এবার বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতি তাদের দখলের আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে তৃণমূল আশ্রিত মাওবাদীরা। আর বলরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক ও মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক স্বার্থে মাওবাদীদের জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত ভোটের পর পুরুলিয়ার বলরামপুরে দু’জন বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্রে করে শোরগোল পড়েছিল রাজ্যে।
ছবি: অমিত সিং দেও