Advertisement
Advertisement
পুরুলিয়ার শহিদ জওয়ান

ফোন আর এল না, কফিনবন্দি হয়ে ঘরে ফিরল শহিদ CRPF জওয়ানের দেহ

স্বামীর দেহর সামনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ত্রী।

Martyr CRPF Jawans mortal remains reached Purulia's home
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:February 20, 2020 12:40 pm
  • Updated:February 20, 2020 12:40 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: স্ত্রীকে বলেছিলেন, তাড়াতাড়ি ডিউটি থেকে ফিরে রাতের বেলায় ফোন করবেন। কিন্তু সেই রাতে আর ফোন আসেনি। পরের দিন রাতে বুধবার তার নিথর দেহ এল কফিনবন্দি হয়ে। গার্ড অফ অনার ও গান স্যালুটে শ্রদ্ধা জানানো হল শহিদকে।

ছত্রিশগড়ের সুকমা জেলার কিসতারাম থানা এলাকায় পালডি গ্রামের কাছে নির্মীয়মান রাস্তায় টহল দেওয়ার সময় মাওবাদীদের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যান তিনি। তিনি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের রামকানালির কাছে লছিয়া গ্রামের বাসিন্দা কানাই মাজি। মাওবাদীদের সঙ্গে লড়তে গিয়ে মাত্র আঠাশ বছর বয়সেই তাঁকে দেশের জন্য শহিদ হতে হয়। সিআরপিএফের কোবরা বাহিনীর ২০৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের এই সদস্য দেশের জন্য শহিদ হলেও এই ঘটনায় তাঁর পরিবার কার্যত অথৈ জলে পড়ল। তার যে একেবারে ছোট দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে অলিভিয়া আড়াই বছরের। ছোট মেয়ে এখনও মায়ের কোলে। বয়স মাত্র এক মাস।

Advertisement

তাই তাঁর স্ত্রী পাপিয়া দেবীর এদিন কান্না আর থামছিল না। কফিনবন্দি দেহর সামনে বসে পড়েছিলেন তিনি। এক মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে শুধুই হা-হুতাশ করছিলেন। বলছিলেন, “কাল দুপুরবেলায় ও বলেছিল ডিউটি থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে রাতে ফোন করবে? কিন্তু কোন ফোন করেনি। আমি মেসেজ করলেও কোন উত্তর পাইনি। পরে এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম ওঁর গুলি লেগেছে। তখন রায়পুরের কন্ট্রোল রুমে বারবার ফোন করি। কিন্তু সবাই আমাকে এড়িয়ে যেতে থাকে। পরে শ্বশুরমশাইয়ের কাছে খবরটা শুনি। শহিদ হয়েছে ঠিক। কিন্তু আমার পরিবারটা শেষ হয়ে গেল। এই দুটো কোলের মেয়েকে নিয়ে কি করব?” ছোট, ছোট স্বপ্ন, আশা যে এভাবে শেষ হয়ে যাবে ভাবতে পারেননি তিনি। কাঁদতে-কাঁদতে তাঁর শুধু একটাই কথা, “যতই চেষ্টা করি আর মানুষটাকে কোনওদিনই ফিরে পাব না।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: ছত্তিশগড়ে মাও হামলায় মৃত পুরুলিয়ার জওয়ান, শোকস্তব্ধ পরিবার]

২০১৪ সালে মাত্র বাইশ বছর বয়সে সিআরপিএফে চাকরি পাওয়ার পর প্রশিক্ষণ। তারপরে পোস্টিং হয় দুর্গাপুরে। সেখানে বছরখানেক থাকার পর জম্মু-কাশ্মীরে যান। সেখানে এক বছর চাকরি করে তারপর মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়। বছর চারেক আগে বিয়ে করে ঘর বেঁধেছিলেন তারা। সুখেই কাটছিল তাঁদের জীবন। হঠাৎই মাও গুলি কেড়ে নিল এই জওয়ানের প্রাণ। তাঁর বাবা দিলীপ মাজি বলেন, “আমার একটাই ছেলে। এভাবে অকালে চলে যাবে ভাবতেই পারছি না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একজন ফোন করে জানায় তার শরীরে গুলি লেগেছে। তারপরেই ফোন কেটে দেয়। আমার সঙ্গে কানাইয়ের দু’তিন দিন আগে কথা হয়।”

কানাই বছরে দু’তিন বার বাড়ি আসত। দু’তিন দিন থাকত। গত ১৭ জানুয়ারি বাড়ি থেকে কর্মস্হলে যায়। তাকে গ্রামের মানুষজন কানাইলাল বলে ডাকত। সবার সঙ্গে হেসে কথা বলত। বাড়িতে এলেই শরীরচর্চা ও খেলাধূলায় ডুবে থাকত। এদিন শেষ শ্রদ্ধায় সমগ্র গ্রাম যেন আছড়ে পড়ে ওই কফিনের সামনে। এদিন ওই নিহত জওয়ানের বাড়িতে সিআরপিএফের কর্তারা ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন।

ছবি: সুনীতা সিং

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ