সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘উসকানিতে’ জয় শ্রী রাম স্লোগান তুলে পুরুলিয়ার হুড়ায় তাণ্ডব চালাল বিজেপি। লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে তৃণমূলের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। বিজেপির পালটা অভিযোগ, কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার নেতৃত্বে তৃণমূলও বিজেপি কর্মীদের উপর পালটা হামলা চালায়।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নকে ঘিরে দু’পক্ষের সঙ্ঘর্ষে বুধবার রীতিমত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হুড়া। ভাঙচুর হয় একাধিক মোটরবাইক। এই ঘটনায় তৃণমূল–বিজেপি মিলিয়ে মোট সাতজন কর্মী জখম হন। তার মধ্যে তৃণমূলের পাঁচ ও বিজেপির দু’জন কর্মী রয়েছেন। তৃণমূলের পাঁচ জন কর্মীর মধ্যে তিনজন দেবেন মাহাতো পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি দু’জন হুড়া ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি। অন্যদিকে, বিজেপির জখম দুই কর্মীই ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিন কাশীপুরে নির্বাচনী সংক্রান্ত কাজে ওই ব্লকে গেলে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি শ্যামাপদ মাহাতোকে ওই বিধায়কের লোকজন রীতিমত তাড়া করে লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিকগত দিক থেকে আপাত শান্ত জেলা পুরুলিয়া যে ভাবে অশান্ত হয়ে উঠেছে, যেভাবে এখানেও প্রতিদিন রক্ত ঝরছে, তাতে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। কারণ, অতীতে ভোটের সময়ও এভাবে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সংঘর্ষ বাধেনি। গত মঙ্গলবার এই হুড়াতেই মনোনয়ন করতে এসে তৃণমূলের হাতে মার খেয়ে জখম হয়েছিলেন এক বিজেপি কর্মী। রাজ্য জুড়ে মনোনয়নকে ঘিরে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেছিলেন, পালটা মার হবে।
দলের রাজ্য সভাপতির ওই মন্তব্যের পর এদিন হুড়া ব্লকে সকাল থেকে লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। যদিও বিজেপির অভিযোগ, এদিন তাদের কলাবনীর কর্মীরা মনোনয়ন করতে এলে তাদের চড়-থাপ্পড় মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর বড়গ্রামের কর্মীরা এলে তাঁদেরও মারধের করে বলে অভিযোগ। তখনই জখম হন বিজেপি কর্মী তথা বড়গ্রামের বাসিন্দা ভীমসেন নন্দী। এরপরই বিজেপির প্রায় আশি-নব্বই জন কর্মী লোহার রড, লাঠি নিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কে মারধের করতে থাকে। হামলার একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি কর্মীরা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে লাঠি নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। এক নেতা বলছেন, ‘কাউকে ছাড়বি না, ঘিরে মার’। এই ভিডিও এদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভাইরাল হয়ে যায়। বিজেপির অভিযোগ হুড়া থানার পুলিশ, তৃণমূলের পক্ষ নিয়ে তাদের কর্মীকে লাঠি দিয়ে মারে। পুলিশের মারে জখম হন শিবু ধীবর নামে এক কর্মী। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা দলের তরফে হুড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিবেক রাঙ্গা বলেন, “সবার আগে তৃণমূল আমাদের উপর হামলা চালায়। তখন আমাদের প্রতিরোধ করতে হয়। হুড়া থানার ওসি তৃণমূলের নেতা হয়ে গিয়েছেন। দলীয় ক্যাডারদের মতো কথা বলছেন। তাকে অবিলম্বে বদলি করতে হবে। আমরা কাছে আবেদন জানাব।” কিন্তু হুড়া থানার পুলিশ লাঠি চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। এদিকে তৃণমূলও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে। এই হুড়া ব্লক কাশীপুর বিধানসভার অন্তর্গত। ওই এলাকার বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ উঠছে, তার কোনও ভিত্তি নেই। বিজেপি এদিন আমাদের নেতা-কর্মীদের মারধর করে, মোটরবাইক ভাঙচুর করে।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.