রাহুল চক্রবর্তী : উপযুক্ত মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজছে পরিবার। দাবিদাওয়া তেমন কিছু নেই। একটাই আবদার, ছেলে যেন বামপন্থী হয়। বৈশাখে সিপিএমের কালো মাথা যখন অণুবীক্ষণ যন্ত্রেও ধরা দিচ্ছে না, তখন শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপন দিয়ে বামপন্থী আদর্শ পাত্রের খোঁজে নামল পাত্রীর পরিবার৷ একটাই শর্ত, ছেলেকে বামপন্থী চাকুরিজীবী পাত্র হতে হবে৷
[দুর্ঘটনার কবলে হিরণের গাড়ি, রক্ষা পেলেন অভিনেতা]
একটু স্পষ্ট করেই বলা যাক! রবিবার সিপিএমের মুখপত্রে বিজ্ঞাপন দেন গল্ফগ্রিনের বাসিন্দা দীপ্তানুজ দাশগুপ্ত৷ বিজ্ঞাপনে খুব স্পষ্ট করে তিনি বলেছেন, “আমার বোনের জন্য বামপন্থী চাকুরিজীবী ৩০-৩২ বছর বয়সি পাত্র চাই৷” শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনে পাত্রীর জীবনপঞ্জিও উল্লেখ করা হয়েছে৷ এমনিতে পাত্র বা পাত্রীর গায়ের রং, উচ্চতা, বয়স, পেশার তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার চল বহুদিনের৷ কিন্তু এক্ষেত্রে তো একেবারে ৩০-৩২ বছরের টগবগে ‘বামপন্থী’ পাত্রর দাবি! তাও আবার সিপিএমের এই বাজারে৷ যখন রাজ্য্যে ৩৪ বছর শাসন করা দলটার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে, তখন ‘বামপন্থী’ পাত্রর খোঁজ কেন?
পাত্রীর দাদা দীপ্তানুজ দাশগুপ্তর ব্যাখ্যা, “ঘটি-বাঙালের লড়াই হয়৷ লড়াই হয় মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের৷ কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে লড়াই হোক সেটা কখনও কাম্য নয়৷ আর চাই না রাজনীতিটা বাড়ির মধ্যে কোথাও ফাটল তৈরি করুক৷ আমরা বামপন্থী৷ তাই চাই, আমাদের পরিবারের যে সদস্য হবে, সেও যেন একই মতাদর্শের হয়৷” দাশগুপ্ত বাড়ির প্রতিটি সদস্যই নাকি বাম আদর্শে অনুপ্রাণিত। সিপিএমের সমর্থক৷ এমনকী দীপ্তানুজবাবু নিজেও ছাত্র রাজনীতি করতেন৷ কাঁধে নিয়েছিলেন এসএফআই-ডিওয়াইএফআইয়ের পতাকা৷ তিনি জানান, বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে পাত্রীর সঙ্গে কথা বলে, তাঁর মতামত নিয়েই ছাপা হয়েছে৷ পাত্রীও বামপন্থী– এমনটাই জানিয়েছেন দীপ্তানুজবাবু৷ কিন্তু এ বাজারেও যখন লাল পতাকা উড়তে দেখা যাচ্ছে না, তখন কী পাওয়া যাবে ‘বামপন্থী’ পাত্র৷ পাত্রীর দাদার দাবি, “অবশ্যই পাওয়া যাবে৷ কে বলেছে সিপিএম শেষ হয়ে গিয়েছে? এখনও প্রচুর মানুষ আছেন যাঁরা সিপিএমকে ভোট দেন৷ আর আজ বিজ্ঞাপনের পরেও কত ফোন এসেছে।”
[টানা ২৫ বছর গাছের পাতা খেয়ে সুস্থভাবে বেঁচে রয়েছেন ইনি]
বিজ্ঞাপনটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও বেশ আলোড়ন ফেলেছে৷ কত ধরনের মন্তব্য তাতে৷ কারও কটাক্ষ, চিনের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলে এমন পাত্র পাওয়া যাবে৷ আবার কারও বক্তব্য, বাংলায় দূরবিন দিয়েও এমন পাত্র পাওয়া যাবে না৷ কেউ আবার সোশ্যাল সাইটে লিখেছেন, বন্ধু কংগ্রেসের ঘরে খোঁজ করুন! তবে বিজ্ঞাপনটা যে চমক দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়৷ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “পরিশীলিত মনের পরিচয় দিয়েছেন ওই বিজ্ঞাপনে৷ খুব সুন্দর বার্তা দেওয়া হয়েছে তাতে৷ এটা হওয়াই উচিত৷” একটা সময় ছিল কংগ্রেসের ঘরের মেযের বিয়ে হত কংগ্রেসের ঘরেই৷ এই বিজ্ঞাপনের সূত্রে সেই ঘরানা আবার মাথা চাড়া দেবে কিনা তেমন জল্পনাও শুরু হয়েছে৷ এবার কি তাহলে সিপিএমের ঘরেই সিপিএমের মেয়ের বিয়ে! চার হাত এক হবে, যদি সে বামপন্থী হয়!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.