দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ম্যাট্রিমনি সাইটে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রতারণার ঘটনায় ধৃতদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিলেন বিচারক। ম্যাট্রিমনি সাইটে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে এই তিন নাইজেরিয়ান উত্তরপাড়ার তরুণীর থেকে সাত লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। তদন্তে নেমে নয়ডা থেকে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার ধৃতদের ট্রানজিট রিম্যান্ডে হুগলিতে নিয়ে আসা হয়। এদিন শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি মল্লিকা গর্গ সাংবাদিকদের জানান, ধৃতদের কাছ থেকে ২০ টি ফোন, তিনটি ল্যাপটপ, দু’টি ট্যাব, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৩০টি পাশবই, ২১ টি এটিএম কার্ড, ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ও ৫০০ আমেরিকান ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ভারতীয় মুদ্রার মধ্যে বাতিল হওয়া পুরনো ৫০০ টাকার নোটও রয়েছে। ধৃত নাইজেরিয়ানদের উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক অ্যাকাউন্ট আছে। ধৃতরা গুরুগ্রাম, নয়ডা থেকে এই অ্যাকাউন্টগুলি অপারেট করতো। নাইজেরিয়ান দূতাবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তিনজনের পাসপোর্ট। এর পিছনে একটা বিরাট চক্র আছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ। জানা গিয়েছে, জেরায় চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। দীর্ঘ আট বছর ধরে তিন নাইজেরিয়ান ভারতে রয়েছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কী করে অবৈধভাবে তিন বিদেশী ভারতে থেকে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসিপি মল্লিকা গর্গের নেতৃত্বে প্রায় দু’ সপ্তাহ ধরে উত্তরপাড়া থানার তিন পুলিশকর্মী নয়ডার বিভিন্ন অঞ্চলে রেইকি করেন। তাঁদের একটি এটিএম কাউন্টারের উপর সন্দেহ হয়। তারপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়ে ওই এটিএম কাউন্টারের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্ত নাইজেরিয়ানদের চিহ্নিত করা হয়।
সোমবার ওই এটিএমে থেকেই এক নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতকে জেরা করে গ্রেটার নয়ডার একটি বড় সোসাইটির বিলাসবহুল ভাড়া বাড়ি থেকে বাকি দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। ভাড়া বাড়িটির মালিক বিদেশে থাকেন। তবে এলাকার মানুষের কাছে এরা নিজেদের ভাল মানুষের একটা ইমেজ বজায় রেখেছিল। এলাকাবাসীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার বজায় রাখাই ছিল এদের প্লাস পয়েন্ট। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার যাবতীয় নথিপত্র এদের নিজেদের কাছে রয়েছে। তবে আধার কার্ডের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি বিদেশীদের কাছে কী করে গেল, তানিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে বাতিল ৫০০ -র নোট উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ, নোটবন্দির সময় কোনও ধনী ব্যক্তি পুরোনো নোট বদলের জন্য এই নারিজেরিয়ানদের সাহায্য নিয়ে তাকতে পারেন। শুধু তাই নয়, এরা বৈদিশিক মুদ্রার লেনদেনের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারে। তা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে ভারতের কোনও বড় মাথা এদের পিছনে রয়েছে। এমনটাই মনে করছে পুলিশ। খুব শিগগির ধৃতদের নিয়ে চক্রের অন্যদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.