অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও গৌতম ব্রহ্ম: গেরস্তের উচ্ছিষ্ট খেয়ে দিন কাটে। কিন্তু ইদানিং যেন শিকার প্রবৃত্তি জেগে উঠেছে রাস্তার নেড়িদের। বুনো কুকুরের মতো আচরণ করছে সারমেয়গুলি। কোথাও ভেড়ার টুঁটি কামড়ে নলি ছিঁড়ে দিচ্ছে তো কোথাও আবার রাস্তার কুকুরের কামড়ে ছিন্নভিন্ন মানব শিশু।
[শিকারি কুকুরের হানায় ৯০টি ভেড়ার মৃত্যু, আতঙ্কে ঘুম ছুটেছে বাসিন্দাদের]
উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর থেকে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া, নেড়ি কুকুরের তাণ্ডবে বিপন্ন জীবন। আঁতকে ওঠার মতোই চরিত্র বদল সারমেয়দের। গত ছ’মাসে পথ কুকুরদের অস্বাভাবিক চরিত্র বদল রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর জেলার মানুষের। প্রায় ২০ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে ১০০টি কুকুরের একটি দল। সারমেয়দের হামলার এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ১৩ জন শিশুর। আতঙ্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে বাচ্চাদের রাস্তায় বের করতেই ভয় পাচ্ছেন সীতাপুরের বাসিন্দারা। মানুষ ও কুকুরে যেন এক অদ্ভূত যুদ্ধ চলছে! ইতিমধ্যে ১৫০ পথ কুকুর মেরে ফেলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিকে আবার সারমেয় বধ রুখতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন গার্গী শ্রীবাস্তব নামে এক আইনজীবী। উত্তরপ্রদেশের সীতাপুরের মতোই কুকুরদের হামলার ২ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে দিল্লির গাজিয়াবাদেও।
[দুষ্কৃতী হানা, প্রাণের বিনিময়ে প্রভুর সম্পত্তি রক্ষা তিন সারমেয়র]
কুকুরের আতঙ্ক ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া বাঁদরা গ্রামেও। গত ২ সপ্তাহে বাড়ির গোয়ালঘরে ঢুকে ৯০টি ভেড়াকে খুন করেছে শিকারি নেড়ির দল। আতঙ্কে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোও বন্ধ করে দিয়েছেন বাঁদরা গ্রামের বাসিন্দারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার পুলিশকর্তা ও কুকুর বিশেষজ্ঞ সুনীল পালের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন কাটোয়ার মহকুমাশাসক সৌমেন পাল। কুকুর বিশেষজ্ঞ সুনীল পাল জানিয়েছেন, রোজকার জীবনে কাঁচা মাংসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল রাস্তার কুকুরেরা। কিন্তু, কোনও কারণে এখন কাঁচা মাংসের জোগান কমেছে। মাংসের লোভেই হিংস্র হয়ে উঠেছে সারমেয়রা। তদন্তেও নেমে জানা গিয়েছে, কাটোয়ার বাঁদরা গ্রামের থেকে দেড় কিমি দূরে কেশিয়া এলাকায় কয়েকটি মাংসের দোকানের আশপাশে থাকে এই কুকুরগুলি। দোকানি নিয়মিত তাদের মাংসের ছাঁট খাওয়াতেন। কিন্তু, এখন সেই দোকানগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর এতেই চরিত্র বদল ঘটেছে রাস্তার কুকুরদের।
উত্তরপ্রদেশের সীতাপুরের গল্পটাও আলাদা কিছু নয়। উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতার আসার পরই শহরের কসাইখানাগুলি অন্যত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। খেপে উঠেছে মাংসের ছাঁটে অভ্যস্ত নেড়িরা। ২ বছরের শিশু থেকে ১৪ বছরের কিশোর, কাউকেই রেয়াত করছে না তারা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শিকারি কুকুরগুলি কিন্তু ‘পাগল’ নয়। আইসোলেশনে রেখে ফের নিরামিষ খাবারে অভ্যস্ত করতে তুলতে হবে সারমেয়দের। মাংসের দোকান লাগোয়া এলাকার রাস্তার কুকুরের উপর প্রশাসনকে নজরদারি চালাতে হবে।
[সাদা ময়ূরের বংশবৃদ্ধি, বেঙ্গল সাফারি পার্কে পর্যটকের ঢল]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.