ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: রাজ্য জুড়ে রক্তাল্পতায় ধুঁকছে বামেরা। কিন্তু রাজ্য রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র বিধানসভা ভবন আপাতত ‘বামপন্থী’ লাল চা-এর দখলে! রাজনীতির সঙ্গে চায়ের সম্পর্ক এদেশে চিরন্তন। তা সে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হোক, বা নিছক আড্ডা! রাজ্যের রাজনৈতিক পীঠস্থান বিধানসভা ভবনও সে নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। বিধানসভা ভবনে চা পিয়াসীদের স্পষ্ট দু’টি ভাগ। বামপন্থীদের চিরকালীন ট্রেডমার্ক ‘লাল চা’। দক্ষিণপন্থীদের পছন্দ দুধ চা। কফির ক্ষেত্রেও বামেদের ভোট ‘ব্ল্যাক’-এর দিকে। কংগ্রেস–তৃণমূলের টান দুধ-কফিতে। অর্ডারও যায় সেই মতো।
কিন্তু কী কাণ্ড! এহেন চা বিলাসের পীঠস্থানে টানা দু’দিন লাল চা ছাড়া কিছু মিলছে না। কেন এই দুর্বিপাক? কেলেঙ্কারির কারণটা অতি সামান্য! গোটা বিধানসভায় কোথাও দুধ নেই। মানে দুধ দেওয়া বন্ধ করেছে সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী। অনেক টাকা বকেয়া থাকায়। এবং সে রহস্য উদ্ধার হল বুধবার। টানা ৪৮ ঘণ্টা পর। তাও বিরোধী দলনেতার ঘরে জরুরি কাজে বাম পরিষদীয় দলনেতার আগমনে। মনমতো দুধ-চা না পেয়ে বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের মেজাজ এদিন সকাল থেকেই ছিল বিগড়ে। একই হাল কফিপ্রেমী দলের মুখ্য সচেতক মনোজ চক্রবর্তীর। এই অবস্থায় জরুরি একটি বিষয় নিয়ে বিরোধী দলনেতার মত জানতে তাঁর ঘরে আসেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তখনই ওঠে ‘চা-কেলেঙ্কারির’ প্রসঙ্গ। সুজনবাবুর জন্য চা আসতেই বেজার মুখে বসে থাকা মান্নান-মনোজরা জানিয়ে দেন, “আজ কিন্তু দুধ চা হবে না। দুধ নেই। লাল চা হয়েছে।” শুনেই সুজনবাবু খুশমেজাজে জানিয়ে দেন, তাঁর তো কোনও সমস্যাই নেই। এ নিয়ে একটু খোঁচাই দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “শাসকদলের পছন্দ বলেই তো কয়েকমাস আগে একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হল। হঠাৎ কী হল?”
এদিকে একই অবস্থা বিধানসভার সচিব জয়ন্ত কোলের। দু’দিন ধরে লাল চায়ে চুমুক দিয়ে মেজাজ বিগড়েছে তাঁরও। কারণ জানতে এদিন কর্মীদের ডেকে খোঁজখবর নিতেই জানতে পারেন দুধওয়ালার ১৬ হাজার টাকা বাকি রেখেছে ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষ। তাতেই দুধের প্যাকেট আসা বন্ধ। শুধু দুধ নয়, ১৪ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে মিষ্টিওয়ালার কাছেও। হাওড়ার বাগনান থেকে ‘স্পেশাল’ মিষ্টি আসে বিধায়কদের রসনাতৃপ্তির জন্য। বন্ধ সেই মিষ্টিও। ২০-২৫ হাজার করে বকেয়া রয়েছে আরও কিছু ক্ষেত্রে। আজ, বৃহস্পতিবার আবার বিধানসভায় আসছেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। চা বিষয়ে তিনিও বেজায় শৌখিন। তাঁকেও কি শেষপর্যন্ত লাল চা-ই দেওয়া হবে? মাথায় হাত কর্মীদের। জানা যাচ্ছে, খাবারের নিম্নমান নিয়ে ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযোগ উঠেছিল। অনেক বলেও অবস্থা না ফেরায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, দায়িত্ব পরিবর্তনের। নতুন সংস্থা দায়িত্ব নিলেই বর্তমানের বিদায়। এই টানাপোড়েনেই টাকা বকেয়া পড়ে যাওয়া। এ নিয়ে হাউজ কমিটি দু’টি বৈঠকও সেরে ফেলেছে। হাউজ কমিটির চেয়ারম্যান বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “আলোচনা হয়েছে। কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.