চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণ। নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে হঠাৎ করে চারিদিকে ‘সন্ধি-সন্ধি’ রব। মন্দির থেকে একশো মিটার দূরে দাঁড়িয়ে এক যুবক সেই আওয়াজ শোনামাত্রই ‘সন্ধি-সন্ধি’ আওয়াজ তুলে দে ছুট পাশের গ্রামের দিকে। সন্ধির সেই বার্তা এভাবেই পৌঁছে যায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে, মন্দিরে মন্দিরে। বন্দুক বা কামান দেগে নয়, আসানসোলের মিঠানি চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গাপুজায় মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণের বার্তা গ্রাম থেকে গ্রামে আজও পৌঁছে যায় রিলে সিস্টেমের মাধ্যমে।
[নিষ্ঠা ভরে চণ্ডীপাঠ, বাড়ির পুজোয় চেনা মেজাজে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি]
পরিবারের প্রবীণতম কর্তা ভাস্কর চক্রবর্তী জানান, প্রায় ৩৫০ বছর আগে পূর্বপুরুষ রামলোচন চক্রবর্তী স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। সেই মতো মান গাছের নিচে পাওয়া পিতলের দুর্গামূর্তিটিকে এনে প্রথম পূজা শুরু করেন তিনি। একটি মাটির সরাতে থাকে জল। সেই জলে ভাসানো হয় এক সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত তামার বাটি। প্রতি চব্বিশ মিনিটে সেই তামার বাটিটি যতবার ডোবে তার উপর অঙ্ক তৈরি করে সন্ধিকাল নির্ঘণ্ট বানান গ্রহরাজ। কাশীপুর রাজাদের দেওয়া তামি পদ্ধতিতেই চক্রবর্তীদের সন্ধিক্ষণ নির্ণয় হয়। নববধূ তনুশ্রী চক্রবর্তী জানান, মহা ধুমধাম করে তিনদিন ধরে ভোগ বিতরণ হয়। পাত পেড়ে অন্নভোগ গ্রহণ করেন গ্রামের আপামর মানুষ। নবরত্ন সহকারে ভাত, খিচুড়ি, লুচি প্রভৃতি বিভিন্ন ভোগ রান্না হয়। দশমীতে মাকে দেওয়া হয় পোড়া মাছের ভোগ। পরিবারের সদস্যদের দাবি মহাষ্টমীতে বলির খড়্গ ধোওয়া জল খেলে নারীর বন্ধ্যাত্ব দূর হয়। সেই বিশ্বাস থেকে মনস্কামনা পূরণের জন্য দূরদূরান্ত থেকে আসেন ভক্তকূল।
[জানেন, কেন ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গা প্রতিমার মুখ আজও কালো?]
এখানে দুর্গা প্রতিমা সাবেকি। একচালা, সোনালি ডাকের অপরূপ সাজ। তবে কার্তিক-গণেশের অবস্থান উল্টো। মা দুর্গার ডানদিকে কার্তিক আর বামে গণপতি।পরিবারের অনেকেই কর্মসূত্রে থাকেন রাজ্যের বাইরে বা কলকাতায়। তবে পুজোর চার দিন সবাই একসঙ্গে। পরিবারের আরেক সদস্য স্বরূপ চক্রবর্তী জানান ব্যবসা, ট্রান্সপার্ট, ডেকরেটার্স, ক্যাটারার থেকে বসতবাড়ি- সবই মা দুর্গার নামে। দশভুজার নামে পাওয়া দেবত্র সম্পত্তির জন্যই পরিবারের অনেকেই আজ কয়লা খনিতে চাকুরীজীবি। তাঁদের আক্ষেপ মা দুর্গার নামে অনেক জমিই এখন ধসের জন্য খনিগর্ভে বিলীন। তবে অনেক ঐশ্বর্য হারিয়ে গেলেও তোপধ্বনি এই পরিবারকে আলাদা করে রেখেছে।