সাবির জামান: সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়লেন মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানার মুকুন্দবাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের এক মুসলিম পরিবার৷ ৫১ পীঠের অন্যতম কিরীটেশ্বরী মন্দিরে প্রয়াত বাবা-মায়ের স্মৃতির উদ্দেশে তাঁরা দান করলেন পৈতৃক জমি৷ এই দানের ফলে মিটল মন্দিরের সমস্যা৷ তাতেই এখন খুশির হাওয়া মন্দির জুড়ে৷ এদিকে জমিদাতারাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন বাবা-মায়ের ইচ্ছাপূরণ করতে পেরে৷
৫১ পীঠের এক পীঠ কিরীটেশ্বরী মন্দিরকে ঘিরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে৷ আর পৌষ মাসে বাৎসরিক মেলার সময় তা পরিণত হয় ভক্তদের জনজোয়ারে৷ এহেন মন্দিরের প্রবেশদ্বার ছিল এলাকার মুকুন্দবাগ গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত আবদুল হাকিম মণ্ডলের জমির উপর৷ তিনি জীবিত থাকাকালীন বারবার স্বেচ্ছায় মন্দির কমিটির কাছে আবেদন রেখেছিলেন ওই জমি যাতে মন্দিরের নামে দলিল করে নেওয়া হয়৷ কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি৷ ইতিমধ্যে হাকিম সাহেবের পর মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্ত্রী তকিমুন্নেশা বিবিরও৷ বাবা-মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী ওই জমি কিরীটেশ্বরী মন্দিরকে দান করতে তোড়জোর শুরু করেছেন তাঁর পুত্র লুৎফল হক, কন্যা রাবেয়া, রাফিয়া বিবি, ফাইজুন বেওয়া ও পৌত্র হাবিবুর হক৷ দাতাদের তৎপরতা লক্ষ্য করে শেষ পর্যন্ত মন্দির কর্তৃপক্ষ ওই জমি দান হিসাবে গ্রহণ করেছেন৷
এই বিষয়ে কিরীটেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত তথা সেবাইত দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ওই জমিটি মন্দিরের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল৷ কেননা ওই জমি দিয়েই মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়৷ তা নিয়ে অবশ্য আমাদের কিছু সমস্যা ছিল বলেই জমিগ্রহণে মন্দির কর্তৃপক্ষের তেমন তাড়াহুড়ো ছিল না৷ কিন্তু জমির মালিক স্বর্গীয় আবদুল হাকিম মণ্ডল জীবদ্দশায় বারবার মন্দির কমিটির কাছে আবেদন করেছিলেন ওই জমি গ্রহণ করতে৷ দেরি হলেও তাঁর সেই ইচ্ছেপূরণ হল৷ সেটাই এখন আনন্দের৷”
মন্দির কমিটি জমিটি গ্রহণ করায় যেমন খুশি হয়েছেন কমিটির অন্যতম সদস্য আক্তার হোসেন, তেমনই মন্দিরের গায়ে জমিদাতাদের ফলক আটকে দিতে পেরে তৃপ্তি বোধ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা অনুপ ভট্টাচার্য, পঙ্কজ দাস, পঞ্চানন মণ্ডলরা৷ তাঁরা বলেন, “এমন ঘটনা এই এলাকায় প্রথম নয়৷ এর আগে বিনোদপুর গ্রামের বাসিন্দা সাদেক শেখ মন্দিরে নিজ খরচে জমি রেজিস্ট্রি করে সেই দলিল মন্দির কমিটির হাতে তুলে দিয়ে নজির গড়েছিলেন নিঃশব্দে৷” একইভাবে নিঃশব্দে থাকতে চেয়েছিলেন লুৎফল হক সাহেবও৷ তাঁর বক্তব্য, “আমরা শুধুমাত্র বাবা-মায়ের ইচ্ছেপূরণ করেছি মাত্র৷ আমাদের কাছে মানুষই ঈশ্বর৷”