Advertisement
Advertisement
শশ্মান

সংক্রমণের ভয়ে ফাঁকা শ্মশান, সফিকুল-ইউনূসদের কাঁধে চেপেই শেষকৃত্য রবীন্দ্রনাথের

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান স্থানীয় কাউন্সিলর।

Muslim person helped to complete a 60 up person`s funeral
Published by: Sucheta Chakrabarty
  • Posted:May 3, 2020 10:25 pm
  • Updated:May 3, 2020 10:25 pm

মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: করোনা আবহে শশ্মানে নেই দাহ করার লোক। লকডাউনে আটকে রয়েছেন পাল পরিবারের বাকি সদস্যরাও। সংক্রমণের আতঙ্কেও পিছপা সকলে। তাই জাতিভেদ ভুলে বৃদ্ধের সৎকারের দায়িত্ব নেন সফিকুল, ইউনূসরা।

funeral-2

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে ব্রেন টিউমারে ভুগছিলেন উলুবেড়িয়ার সিজবেড়িয়ার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ পাল। করোনা আবহে শনিবার মারা যান এই ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ। তবে তাঁর সঙ্গেই শেষ হয়ে গেল সমস্ত মানবিক সম্পর্কগুলো। লকডাউনের জেরে আটকে তাঁর পরিজনেরা। অন্যদিকে করোনা আবহে কমেছে শেষকৃত্যের লোকও। সংক্রমণের ভয়ে মৃতের ধারে কাছে ঘেষতে চাইছেন না তাঁরাও। ফলে পরিস্থিতি দেখে এগিয়ে এলেন এলাকার সফিকুল, ইউনূসরা। তারাই পাল পরিবারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবুর মৃতদেহ নিয়ে গেলেন শ্মশানে। বাঁশ, কাঠ জোগাড় করে সাজালেন চিতা, সৎকার হল বৃদ্ধের। ঘটনাটি উলুবেড়িয়া পুরসভা এলাকার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় রবীন্দ্রনাথবাবুর পরিবারই একমাত্র হিন্দু পরিবার। তাঁর পরিবারে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, ছেলে তন্ময় পাল ও বৌমা। তন্ময় পালের বক্তব্য, “বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ সৎকার করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে যায়। কারন তাঁদের আত্মীয়রা দূরে থাকেন। লকডাউনের ফলে তাঁরা আসতে পারছেন না। তাঁর উপর বিভিন্ন শ্মশানে ফোন করে জানলেও করোনা আতঙ্কে ডোমেরা কাজ করতে রাজি হননি। এই অবস্থায় এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী মুসলমান ভাইয়েরা। তাদের সহায়তায় রবীন্দ্রনাথ বাবুর মৃতদেহের সৎকার করা হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের রীতি নীতি মেনেই। তারাই অনেকে এসে রবীন্দ্রনাথবাবুর খাট কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যান শ্মশানে। আনা হয় কাঠ-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান। তবে এই খবর পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর শাশ্বতী সাঁতরাও ওয়ার্ডের কয়েকজন লোক পাঠান রবীন্দ্রনাথ বাবুর বাড়িতে তাঁদের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য।”

Advertisement

[আরও পড়ুন:করোনা রুখতে নবগ্রহ পুজো! সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ছবির ভিত্তিতে গ্রেপ্তার ৫]

সিজবেড়িয়ার বাসিন্দা শেখ সফিকূল ইসলাম বলেন, “রবীন্দ্রনাথবাবু আমাদের প্রতিবেশী। আমারা আপদে বিপদে এমনকি সমস্ত অনুষ্ঠানে একে অপরের পাশে থাকি। তাই জ্যেঠুর পরিবারের কোনো সমস্যা হলে আমাদের তো এগিয়ে আসতেই হবে। একদিকে ওনার পরিবারে বেশি লোকজন নেই। তার উপরে করোনা আতঙ্কে কেউ মৃতদেহ দাহ করতে চাইছেন না। তাই আমরা নিজেরাই এগিয়ে এলাম জ্যেঠুর শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে।”এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাশ্বতী সাঁতরা। তাঁর কথায়, “করোনা আতঙ্কে কেউ রবীন্দ্রনাথ বাবুর মৃতেদহ দাহ করতে রাজী হচ্ছেনা এটা জানতে পেরে আমি ওয়ার্ডের ছেলেদের পাঠাই। পরে সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।” তবে যেভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিপদের দিনে পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাতে সমাজের কাছে সম্প্রীতির বার্তায় পৌঁছবে। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরের প্রয়োজনে পাশে থাকবে এটাই বাংলার সংস্কৃতি। এটাই হয়ে আসছে বাংলায়।

[আরও পড়ুন:কোটা থেকে ফিরে নয়া বিপদ, হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেও সামাজিক বয়কটের মুখে ছাত্রী]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ