ছবি: প্রতীকী
বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ৩৭৫। যথেষ্ট ভাল নম্বরই বলা যায়। এমন নম্বর পাওয়া পড়ুয়ার বাড়ির লোকজনের আনন্দ হওয়ারই কথা। কিন্তু বাড়ির মেয়ের প্রাপ্ত নম্বর জানার পর অঝোরে কেঁদে চলেছেন ছাত্রীর মা। কারণ যিনি পেয়েছেন ওই নম্বর, তিনি আজ আর পৃথিবীতে নেই। প্রায় মাসখানেকেরও বেশি আগে পাঁচতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন ওই ছাত্রী।
ঘটনাটি ঘটেছিল গত ৪মে বুধবার গভীর রাতে নদিয়ার রানাঘাট পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চিলড্রেনস পার্কের কাছে একটি বেসরকারি আবাসনে। ওই ছাত্রীর নাম অনুষ্কা ঘোষ(১৮)। রানাঘাটের চিলড্রেন্স পার্কের কাছের ওই আবাসনে বাবা বিশ্বনাথ ঘোষ এবং মা টুম্পা ঘোষের সঙ্গে থাকতেন অনুষ্কা। রানাঘাট ব্রজবালা গার্লস হাই স্কুল থেকে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা (HS Exam) দিয়েছিলেন। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন অনুষ্কা। বিশ্বনাথ ঘোষ কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিয়ে ব্যবসা করেন। প্রায় বছর দশেক ধরে ওই আবাসনেই থাকতেন অনুষ্কারা।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, রানাঘাটের আনুলিয়ার কাছে একটি ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল অনুষ্কার। কিন্তু সেই সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। যার জেরে কিছুটা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন অনুষ্কা। মৃতার বড় মাসী মিঠু দত্ত জানান, “সেদিন সন্ধে ৭টা নাগাদ অনুষ্কার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। ও বলেছিল, আমি বাড়িতেই আছি বড় মাসি। ওর সঙ্গে একটি ছেলের প্রেমের সম্পর্কও ছিল। শেষের দিকে সেই সম্পর্কে খানিক চিড় ধরেছিল। যে কারণে অনুষ্কা কিছুটা মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সেই জন্যই ও পাঁচতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল।” পরে আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে রানাঘাট থানার পুলিশ সৌরভ সাহা নামে অনুষ্কার প্রেমিককে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে, প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও মেয়ের শোক বিন্দুমাত্র ভুলতে পারেননি অনুষ্কার মা টুম্পা ঘোষ। সেদিনের ঘটনার পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত রানাঘাট কামারপাড়ায় তাঁর বোনের কোয়ার্টারেই রয়েছেন তিনি। নিজের বাড়ি ফেরেননি। আজ, শুক্রবার সকালে অনুষ্কার ৩৭৫ নম্বর পাওয়ার খবর জানতে পারেন বাড়ির সকলে। মেয়ের রেজাল্ট জানার পর থেকে শোকে আরও ভেঙে পড়েছেন অনুষ্কার মা। মৃতা ছাত্রীর মাসি মিঠু দত্ত এদিন বলেন, “যে এত ভাল রেজাল্ট করল, সে-ই তো নেই। তাই ভাল রেজাল্ট দেখে কাকে নিয়ে আনন্দ করব? আমাদের এখন কান্না ছাড়া আর কোনও পথ নেই।” ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে তখনও ভেসে আসছিল অনুষ্কার মায়ের কান্নার শব্দ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.