Advertisement
Advertisement

কুয়েতে কাজে গিয়ে রহস্যমৃত্যু নদিয়ার যুবকের

দেহ ফেরাতে প্রশাসনের দ্বারস্থ পরিবার।

Nadia labourer dies mysteriously in Kuwait

ছবিতে আশাদুল শেখ।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:October 30, 2018 12:07 pm
  • Updated:October 30, 2018 12:08 pm

পলাশ পাত্রতেহট্ট: কুয়েতে কাজ করতে গিয়ে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল নদিয়ার এক শ্রমিকের। মৃতের নাম আশদুল শেখ (৪৬)। বাড়ি নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার গোটপাড়ায়। যদিও স্ত্রী পারভিনা বিবির দাবি, স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিক নয়। কেননা বৃহস্পতিবার রাতে যখন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আশাদুল শেখের মৃত্যুর খবর আসে, তার ঘণ্টাদুয়েক আগেই তিনি বাড়িতে ফোন করে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। দিব্যি সুস্থ ছিলেন। হঠাৎ করে কী এমন ঘটল তা নিয়ে সংশয়ে গোটা পরিবার। এদিকে সংসারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মৃত্যুতে বাড়িতে নেমেছে শোকের ছায়া।

স্ত্রী পারভিনা বিবি বলেন, ‘আমাদের অভাব অনটনের সংসার, তাই কুয়েতে কাজে গিয়ে হাল ফেরাতে চেয়েছিল আমার স্বামী। প্রতিদিনই বিকেলের দিকে আমাকে ফোন করত। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ফোন করে সকলের  খোঁজ নিচ্ছিল। একবার হাতে ব্যথার খবর জানিয়েছিল। আর কোনও সমস্যার কথা বলেনি। তারপরই পাশের গ্রাম বাণিয়াখড়ি থেকে আমাদের আত্মীয়রা ফোন করে জানায় ও মারা গিয়েছে। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় ফের ওকে ফোন করি। কিন্তু কোন সাড়া পাইনি। ওখান থেকে জানানো হয় রাত ৭.৪৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওর মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় দীর্ঘক্ষণ ভিডিওকলে কথা হয়। ঘটনার দিনও হল, কিন্তু কীভাবে যে মৃত্যু হল তা বুঝতে পারছি না।’

Advertisement

[টিটাগড়ে গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতার মৃত্যু, এলাকায় উত্তেজনা]

আশাদুল শেখের ছেলে মিজানুর স্থানীয় মুড়াগাছা গভঃ কলেজের ছাত্র। সম্প্রতি বাড়ির বাথরুমের জন্য নতুন দরজা কিনেছে ছেলে। বাবাকে ভিডিও কলের দরজার বিভিন্ন প্যাটার্ন দেখায় মিজানুর। তারপর আশাদুল শেখের পছন্দমতো দরজা কেনা হয়। এই সময় কোনওরকম শারীরিক অসুস্থতার কথা ছেলেকেও বলেননি ওই শ্রমিক। এদিকে ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে কেঁদেই চলেছেন বৃদ্ধ বাবা নূর আহমেদ ও মা আনোয়ারা বিবি। স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মেয়ের এখন একটাই আরজি, বিদেশ বিভুঁইয়ে প্রাণ গিয়েছে। দেহ যেন খুব শিগগির দেশে ফেরে। ইতিমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পরিবারের তরফে দরবারও করা হয়েছে।

Advertisement

জানা গিয়েছে, আদতে তাঁত শিল্পী আশাদুল। বাড়িতে তাঁর তাঁতবোনার আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিও ছিল। কিন্তু কিছুদিন ধরে সংসার চালিয়ে উঠতে পারছিলেন না। ঘাড়ে চেপেছিল দেনার বোঝা। এসব থেকে নিস্তার পেতেই কুয়েতে শপিংমলে কাজের জন্য আবেদন করেন। পুরো বিষয়টি যাতে তাড়াতাড়ি মেটে সেজন্য কয়েক লক্ষ টাকা ঋণও নেন। তারমধ্যে দু’লক্ষ টাকা দালালকে দিয়ে তিনি কুয়েতে পৌঁছান। বলা বাহুল্য, শপিংমলে কাজ দেওয়ার নাম করে নিয়ে গেলেও আশাদুল শেখকে নিরাশ করা হয়। বেশকিছুদিন এদিক সেদিক কাজ করার পর সম্প্রতি একটি গ্যাস সংস্থায় কাজ জুটে যায় তাঁর। মাসে মাসে বাড়িতে টাকাও পাঠাতেন। তা দিয়েই সংসার চলত। এক কাজ চেয়ে বিদেশ গিয়ে অন্যকিছু করতে হচ্ছে বলে মনে দুঃখ ছিলই। কিন্তু সংসারের মুখ চেয়ে সেসব হজম করে নিয়েছিলেন ওই শ্রমিক। বাড়িতে টাকা পাঠাতে পেরেও তিনি সুখেই ছিলেন। তাছাড়া চড়া সুদে নেওয়া ঋণ শোধের বিষয়টিও রয়েছে। এসবের মধ্যে আচমকা মৃত্যুর ঘটনায় অস্বাভাবিকতা দেখছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। মৃত্যু হয়েছে, এখন আর প্রিয়জন ফিরবে না। কিন্তু তার দেহ দেশে ফিরুক চাইছে গোটা পরিবার। এনিয়ে গত কয়েকদিনে বিডিও থেকে প্রশাসনিক মহল কোথাও হাঁটাহাঁটি করতে বাদ দেয়নি ছেলে মিজানুর।  ঘটনা প্রসঙ্গে নাকাশিপাড়ার বিডিও সমর দত্ত জানান, মৃতের পরিবার দেহ ফেরানোর আবেদন  করেছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি।

[যৌনকর্মীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে বিশেষ কর্মসূচি বর্ধমানে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ