বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: এক কিশোরের মৃতদেহ দাহ করতে নিয়ে এসেছিল মৃতের পরিবারের লোকজন। সঙ্গে রয়েছে ডেথ সার্টিফিকেটও। হটাৎই তাদের ধারণা হয়, মৃতের শরীরে তখনও রয়েছ প্রাণ। তা নিয়েই চাঞ্চল্য ছড়াল নদিয়ার নবদ্বীপ মহাশ্মশানে। মৃতের বাড়ির লোকজন বিষয়টি জানান শ্মশান কর্তৃপক্ষকে। সেইখান থেকে খবর যায় নবদ্বীপ থানায়। থানায় ওই দেহটি এনে গাঠানো হয় নবদ্বীপ হাসপাতালে। যদিও মিথ্যে প্রমাণিত হয় ওই কিশোরের বাড়ির লোকজনের ধারণা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই কিশোরের দেহ পরীক্ষা মৃত-ই ঘোষণা করে। পুলিশ সুত্রে খবর, মৃত ওই কিশোরের নাম অভিজিৎ সরকার (১৭)। তার বাড়ি নদিয়ার তেহট্ট থানার বেতাই এলাকায়। শুক্রবার গভীর রাতে অভিজিৎ সরকারের দেহটি তার নাড়ির লোকজন নবদ্বীপ শ্মশানে দাহ করাতে নিয়ে আসেন। কিন্তু কিছুক্ষন পড়ে পরিজনদের ধারণা হয়, অভিজিতের শরীরে তখনও প্রাণ রয়েছে। সেই ধারণা থেকে মৃতের বাবারও একই বিশ্বাস জন্মে। বিষয়টি তড়িঘড়ি তারা শ্মশান কর্তৃপক্ষকে জানান। শ্মশান কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় থানার আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে দেহটি থানায় পাঠিয়ে দেয়। পুলিশের সহযোগিতায় ওই কিশোরের দেহটি নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার পরীক্ষা করে পুনরায় তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। পরে হাসপাতালের নির্দেশে ওই কিশোরের দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কৃষ্ণনগরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
[দু’বছর পর বাড়ি ফিরল পাচার হওয়া কিশোরী, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ]
পুলিশ ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নদিয়ার তেহট্ট থানার বেতাই এলাকার বাসিন্দা পেশায় কৃষিজীবী তাপস সরকারের দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে অভিজিৎ সরকার বেতাই উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। জানা যায়, গত নভেম্বর মাসে পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়লে তার মা একটু বকাঝকা করেছিলেন। এরপর ওই মাসে কোনও একরাতে বাড়িতে থাকা কীটনাশক খেয়ে ফেলে সে। সেই সময় পরিবারের লোকেরা তাকে প্রথমে তেহট্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করে। সেখানে দীর্ঘ দেড় মাস চিকিৎসা চলার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে অভিজিৎ সরকার। মৃত কিশোরের বাবা তাপসবাবু বলেন, ‘দীর্ঘ নয়মাস আমার ছেলে সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। গত ১৩ জুলাই ছেলের পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হলে তেহট্ট হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে, তাকে আবারও এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে রেখে তার চিকিৎসা চলে। ২০ জুলাই শুক্রবার সকাল সাড়ে নটা নাগাদ আমার ছেলে মারা যায়। ওইখানকার ডাক্তার আমার ছেলের ডেথ সার্টিফিকেট দেন। রাতে মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়ি এনে কিছুক্ষণ রাখার পর নবদ্বীপ শ্মশানে নিয়ে যাই। আমাদের আত্মীয়দের ধারণা হয়, তখনও আমার ছেলের দেহে প্রাণ রয়েছে। আশা নিয়ে শেষ চেষ্টা করি। কিন্তু না, ডাক্তার ফের জানিয়ে দেন, আমার ছেলে মারাই গিয়েছে। কিন্তু ওরা আমার ছেলের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করতে পাঠাল। না পাঠালেই তো হত।’
যদিও নবদ্বীপ হাসপাতালেরা সুপার বাপ্পাদিত্য ঢালি বলেছেন, ‘ওই কিশোরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাই, মৃত অবস্থায় আনা দেহ ময়নাতদন্ত করাতেই হয়’। ওই কিশোরের বাড়ির লোকজন এরপর ফের মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে গিয়ে সৎকার করার উদ্যোগ নেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.