সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: “উই আর নাইট হান্টার… এক গোলি এক শিকার…।’’ পাখি মেরে নাগা জওয়ানদের উল্লাসের ছবি ছড়াল সোশ্যাল সাইটে। ফেসবুকে এহেন পোস্টকে ঘিরে ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নাগাল্যান্ড সশস্ত্র পুলিশ। মৃত পাখিটি মদনটাঁক। বন দপ্তরের পুরুলিয়া বিভাগের অযোধ্যা পাহাড়তলি। আড়শা বনাঞ্চলের সিরাকাবাদ জঙ্গলেই এই মদনটাঁক পাখির বসবাস। ওই জঙ্গলে গিয়েই এদিন পাখি মারেন নাগা জওয়ানরা। তারপর বন্ডিং জেমস(জামি) নামের এক ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সেই ছবি পোস্ট করা হয়। এরপরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
[নম্বর বিভ্রাটের সমস্যায় দ্রুত সমাধানের আশ্বাস শিক্ষা সংসদের, স্বস্তিতে ছাত্রী]
বিতর্কিত পোস্টটিতে মোট দশটি ছবি রয়েছে। তারমধ্যে ন’টি ছবিতেই ধরা পড়েছে শিকার করা পাখিটিকে নিয়ে জওয়ানদের উল্লাস। ভাইরাল হওয়া ছবিগুলি এখন হোয়াটসঅ্যাপেও ঘুরছে। ফেসবুক ইউজার বন্ডিং জেমস তাঁর পোস্টে বলেছেন “উই আর নাইট হান্টার… এক গোলি এক শিকার…আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি উইথ মাই নাগা ফ্রেন্ড ইন সিরকাবাদ ফরেস্ট…।” ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাতে শিকার করা মদনটাঁক পাখির লোম ধরে টানছেন নাগা জওয়ানরা। সঙ্গে রয়েছে শিকার করা একাধিক ঘুঘুর ছবি। পাখি ও বিভিন্ন বন্যপ্রাণ নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে তাদেরও নজরে এসেছে এই ভাইরাল ছবি। সংস্তার তরফে গোটা বিষয়টি ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল বোর্ডকে জানানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বনদপ্তরের কাছে গোটা বিষয়টির রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল বোর্ড। এদিকে বন দপ্তরের পুরুলিয়া বিভাগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছেও অভিযোগ করেছে। বর্তমানে ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটালিয়নের নাগাল্যান্ড সশস্ত্র পুলিশের ১৩ নম্বর ব্যাটালিয়ন পুরুলিয়ার মাওবাদী দমনে মোতায়েন রয়েছে। এই ঘটনা শুনে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া জানান, গোটা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। পুরুলিয়া বিভাগের ডিএফও রামপ্রসাদ বদানা বলেন, “আমার কাছে এই অভিযোগ আসা মাত্রই গোটা বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানিয়েছি। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
[রোগীর আত্মীয়দের হাতে প্রহৃত চিকিৎসকরা, কর্মবিরতি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে]
২০১০ থেকে জঙ্গলমহলের এই জেলায় মাওবাদী দমনে মোতায়েন রয়েছে নাগাল্যান্ড পুলিশ। প্রায় আট বছরে ওই পুলিশের একাধিক বাহিনী এই জেলায় কাজ করেছে। প্রত্যেকটি বাহিনীই জঙ্গলমহলের একাধিক একদা মাও উপদ্রুত এলাকায় ঘন জঙ্গলে গিয়ে পাখি শিকার করে বলে অভিযোগ। এয়ার গান, বাঁটুলের সাহায্যে তারা এই কাজ করে থাকে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত শিকার খানিকটা বন্ধ ছিল। কিন্তু গত ছ’মাস ধরে আবার নির্বিচারে নানান পাখি মারছে নাগা ব্যাটেলিয়ন। সেই তালিকায় চড়ুই থেকে জাতীয় পাখি ময়ূরও। শালিক থেকে ধনেশ। বাদ দেয়নি কিছুই। নাগা জওয়ানদের এই অবাধ পাখি নিধনে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের অযোধ্যা পাহাড় রেঞ্জ এলাকার একাধিক বনাঞ্চলে বিবিধ প্রজাতির পাখির দেখা মিলছে না। পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় পাখি নিয়ে কাজ করা একটি বন্যপ্রাণ সংস্থার কর্তা অনির্বাণ পাত্র বলেন, “আমরা পুলিশকে বারবার বলেছি। বনদপ্তরকেও জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না। পুরুলিয়ার জঙ্গল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে মদনটাঁক নিয়ে যেভাবে নাগা জওয়ানদের উল্লাসের ছবি সোশ্যালসাইটে পোস্ট হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। এরপরেও কি প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেবে না?” বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মদনটাঁক পাখি বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ শ্রেণিতে চার নম্বরে রয়েছে।
ছবি: অমিত সিং দেও