নন্দন দত্ত, সিউড়ি: কালী হলেও আকালী। ফলে পুজোর ক্ষেত্রে নিয়ম নাস্তি। যেখানে অমাবস্যার রাতে কালীপুজো হয় সেখানে আকালীপুরে পুজো হল দিনের বেলা। ছাগ বলিও হল। তবে সব কিছুই দিনের বেলা। রাতে মা নৈশলীলা করেন। তাই নিঝুম অন্ধকার। মহারাজ নন্দকুমারের সময় থেকেই তার প্রতিষ্ঠিত কালীপুজোর এমনই নিয়ম। প্রতিষ্ঠার পরই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার মিথ্যা মামলার রায়ে মহারাজের ফাঁসির নির্দেশ দেয়। তারপর থেকেই তার ছেলে গুরুদাস রায় কালীর জন্য নির্মীয়মাণ মন্দির অসম্পূর্ণ রেখে দেন। এখন অবশ্য মন্দির সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে অসম্পূর্ণ মন্দিরেই ১৭৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কালী মূর্তি। ক্রমে কালীক্ষেত্র হলেও নলহাটির এই জায়গা আকালীপুর নামেই পরিচিতি পায়।
একটি মাত্র কষ্টিপাথরে তৈরি পদ্মাসনা কালীমূর্তি দেশে জরাসন্ধ কালী নামে প্রতিষ্ঠিত। ইতিহাসের মগধ রাজ জরাসন্ধ পাতালে বসে এই কালীমূর্তির পুজো করতেন। তখন বর্তমানের বিহার ছিল ইতিহাসের মগধ ক্ষেত্র। জরাসন্ধের মৃত্যুর পর সেই মূর্তি পাতালেই থেকে যায়। রাজস্থানের যোধপুরের রানি অহল্যাবাই কিছুদিন মগধে থাকাকালীন স্বপ্নাদেশে পাতালে শিবমূর্তির সন্ধান পান। সেই শিবমূর্তি খননের সময় পদ্মাসনা কালীমূর্তিটি উদ্ধার হয়। সাপের কুণ্ডলীর উপর পদ্মাসনে বসেন দেবী। মাথায় তার সহস্র নাগের ফনা। হাতে পায়ে সাপের নকশা।
সিংহাসন থেকে দেবী একটি মাত্র কষ্ঠি পাথরে তৈরি। ভংকরদর্শনা। মূর্তিটি যেহেতু মগধে মিলেছে তাই রানি অহল্যা সেটি তৎকালীন কাশীরাজ চৈতসিংকে দান করেন। কাশী রাজহলেও চৈতসিং তখন মগধের রাজাছিলেন। মূর্তিটি সিংহাসন-সহ একটি পাথরে তৈরি হওয়ায় তৎকালীন ইংরেজ শাসক ওয়ারেং হেস্টিংসের নজরে পড়ে। ইংল্যান্ডের মিউজিয়ামে সেটি নিয়ে যাওয়ার বাসনা জাগে তার। কাশীরাজ চৈত সিং তখন মূর্তিটি বাঁচাতে কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গার জলে লুকিয়ে দেন। কলক্রমে মহারাজ নন্দকুমার বাংলার দেওয়ান হিসাবে কাশীধামে যান। গঙ্গাবক্ষ থেকে মূর্তি উদ্ধারের স্বপ্নাদেশ পান। সেই মূর্তি গঙ্গা দিয়ে দ্বারকা নদ বেয়ে বীরভূম আসে। সেখান থেকে নৌকা যোগে ব্রাক্ষণী নদী দিয়ে নলহাটির এই আকালীপুরে সেই মূর্তি এসে ঘাটে নামে।
মূর্তিটি এতই ভারী যে বটতলায় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিদিন ধীরে ধীরে সরাতে হয়েছে। ইতিহাসের ধারা বেয়ে সেই মূর্তির পুজো হয় দিনের বেলা। প্রতিদিন তেঁতুল দিয়ে মাছের টক হয়। দু’কেজি আতপ চালের ভোগ হয়। তবে কালী পুজো হয় অন্য মতে। দিনের বেলা। সোমবার দিন কালী পুজো দেখতে ভিড় জমান অনেকেই। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবছরই প্রথম মন্দিরের চারপাশে লাগানো হয় সিসি ক্যামেরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.