সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রোজ রাতে ঘুমিয়ে মেয়েটা স্বপ্ন দেখে সে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। গোটা আকাশটা আজ তাঁর হাতের মুঠোয়। ঘুমের মধ্যেই তাঁর মুখে ফুটে ওঠে জয়ের হাসি, কিন্ত ঘুম ভাঙলেই আবার সে এসে দাঁড়ায় বাস্তবের মুখোমুখি। বুঝতে পারে তাঁর দু’চোখে আকাশে ওড়ার যে স্বপ্ন আছে, সেটা ধীরে ধীরে ম্লান করে দিচ্ছে তাঁদের আর্থিক সঙ্কট। মেয়েটার হাসি মুখ মিলিয়ে যায়, চোখের কোণে জমে জল। কিন্ত তবু তাঁর লড়াই থামে না। এটা কোনও গল্প নয়, ঘটনাটি ঘটেছে ডুয়ার্সের রামঝরা বন্ধে।
চা বাগানের মেয়ে ১৭ বছরের প্রিয়াঙ্কা রাই নিজের চেষ্টায় ক্যারাটেতে বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আর তারপরই ২০১৬ সালে ডুয়ার্স পরিদর্শনে গিয়ে ভাল খেলার জন্য প্রিয়াঙ্কাকে ল্যাপটপ প্রদান করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এরপর কেটে গিয়েছে বেশ কিছু বছর, অন্যান্য অনেক চা বাগানের মতোই বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রিয়াঙ্কার বাবা ও মা যে চা বাগানে কাজ করতেন সেটিও। কয়েক হাজার চা বাগান শ্রমিকের মতই প্রিয়াঙ্কার বাবা, মাও আজ বেকার। তাই কোনওমতে এক ভাই ও বোনকে নিয়ে একবেলা খেয়ে জীবনযাপন করছে প্রিয়াঙ্কা। সংসারের অভাবে ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন আজ বিপন্ন।
[বিশ্বজয়ের পর ঘরে ফিরলেন সুরজিৎ, দৃষ্টিহীন ক্রিকেটারকে ঘিরে উৎসব নন্দকুমারে]
কিন্ত সে ক্যারাটেকে ভুলে গেলেও, ক্যারাটের মঞ্চ তাঁকে ভোলেনি। তাঁর প্রমাণ পাওয়া গেল যখন জাতীয় ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর ডাক পড়ল। মেয়েটি নতুন আশায় বুক বেঁধে আবার প্র্যাকটিসে নেমেছিল, কিন্ত কটাদিন যেতে না যেতেই বুঝতে পারল স্বপ্ন বোধহয় স্বপ্নই থেকে যাবে, কারণ আর্থিক সঙ্কট তাঁর পায়ে লোহার শিকলের মতো আটকে রয়েছে। তাই হাজার চেষ্টা করেও জাতীয় ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করার মতো অর্থ সে আজও জুটিয়ে উঠতে পারেনি। তাঁর কোচ অনিল তিতুং মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদনের ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন, বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে দেখা করেছেন। অনেক জায়গা থেকেই সাহায্যের আশ্বাস এসেছে, কিন্ত শেষ পর্যন্ত খেলতে যাওয়ার মতো অর্থ সে জোগাড় করে উঠতে পারেনি।
জানা নেই অদূর ভবিষ্যতে তার এই আর্থিক সংকটের পাশে কেউ কোনদিন এসে দাঁড়াবে কিনা। জানা নেই প্রিয়াঙ্কা রাই-এর জাতীয় ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করার স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হবে কিনা। শুধু ভয় একটাই, বন্ধ চা বাগান থেকে উঠে আসা এই বিরল প্রতিভা আরও হাজার হাজার প্রতিভার মতো ধীরে ধীরে কালের স্রোতে মিলিয়ে যাবে না তো?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.