ফাইল ছবি
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সবাইই চান সভাধিপতি হতে। অথচ দল চায় যোগ্য নেতৃত্ব। পুরুলিয়ায় সভাধিপতির ‘হট সিট’ পেতে এখন তুমুল প্রতিযোগিতা। ইতিমধ্যেই সভাধিপতি পদের দাবিদার হতে শাসকের শিবিরে জমা পড়ল ২৬টি বায়োডেটা। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদ পাওয়ার জন্য তৃণমূলের ২৬ জয়ী সদস্যই বায়োডেটা জমা করেছেন। এই জেলা পরিষদের ২৬ জয়ী সদস্যই চাইছেন এই সিটটিতে বসতে। অন্যদিকে রাজ্য তৃণমূল চাইছে জঙ্গলমহলের এই জেলায় এবার একেবারে সঠিকভাবে, কার্যত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সবকিছু হোক। সভাধিপতির কুর্সিতে একেবারে যোগ্য জনপ্রতিনিধিকে বসাতে। তাই রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশেই পুরুলিয়া জেলা পরিষদের ২৬ জয়ী সদস্যই তাঁদের জীবনপঞ্জী সম্প্রতি জমা করেছেন দলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর কাছে। এনিয়ে দলে গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। তাই বুধবার তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে দলের জেলা পরিষদের জয়ী সদস্যরা ওই বায়োডেটা জমা করেছেন। আসলে একেবারে স্বচ্ছতার সঙ্গে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি ঠিক করা হবে। যেমনভাবে আমরা নির্বাচনে জেলাপরিষদের প্রার্থী তালিকা ঠিক করেছিলাম।” দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাপরিষদে ৩৮ আসনে প্রার্থীর জন্য ১৬৮টি বায়োডেটা জমা পড়েছিল। সেখান থেকে প্রার্থী বাছাই হয়। এবার সভাধিপতির পদ সাধারণ। গতবারের মতো এবারও দল কাউকে প্রজেক্ট করে ভোটে লড়েনি।
পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সভাধিপতির জন্য ২৬ জনের বায়োডেটা চাওয়া হলেও এই ‘হট সিট’–এর মূল দাবিদার কিন্তু চারজনই। ভোটের আগে তালিকাটা পাঁচ থাকলেও বিদায়ী সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো ন’হাজারের বেশি ভোটে হেরে যাওয়ায় সেটা এখন চার হয়ে গিয়েছে। তাঁরা হলেন হেমন্ত রজক, সৌমেন বেলথরিয়া, গুরুপদ টুডু ও সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই চারজন মূল দাবিদার হলেও এই ‘হট সিট’-এর চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী তথা নারী ও শিশু কল্যাণের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ নিয়তি মাহাতো, মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর ভাইপো মেঘদূত মাহাতো, বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ হলধর মাহাতো ও দলের শহিদ পরিবারের দু’বারের জয়ী সদস্য তথা জেলা সম্পাদক সুমিতা সিং মল্লর নামও। ইতিমধ্যেই জয়ী সদস্যদের কয়েকজন নিজেদের মতো করে ছক করতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় দরবারও চলছে। তবে দল যে এবার সবদিক খতিয়ে দেখে তবেই এই জেলা পরিষদের ‘হট সিট’ বাছবে তা পরিষ্কার। কারণ, এই জেলায় যেভাবে গেরুয়া বাড়ছে তাতে এই প্রশাসনিক পদেও দক্ষ সংগঠককে আনতে চায় দল। তাছাড়া সভাধিপতির পদ সাধারন হলেও আদিবাসী একটা বড় ফ্যাক্টর। এছাড়া বিজেপিকে ঠেকাতে এই চেয়ারে তরুণ জয়ী সদস্যকেও বসানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলের। দক্ষ সংগঠকের দিকটি বিচার করলে সুজয় বন্দ্যেপাধ্যায় যোগ্য। তাছাড়া ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে তাঁর অভিজ্ঞতা দারুণ। বলা যায়, প্রশাসক হিসাবেও দক্ষ। টানা পাঁচবার তিনি ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে জয়লাভ করেছেন। সফলতার সঙ্গে জেলাপরিষদের পূর্ত ও পরিবহণ কর্মাধ্যক্ষের চেয়ার সামলাচ্ছেন। আদিবাসী বিষয়টিকে দল গুরুত্ব দিলে প্রথম নাম রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু-র স্বামী আদিবাসী শিক্ষক নেতা গুরুপদ টুডু। এলাকায় দক্ষ সংগঠকও তিনি। তরুণের দিকটি বিবেচনা করলে কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি তথা বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার পুত্র সৌমেন বেলথরিয়া। তিনি বিটেক। সেক্টর ফাইভে একটি সুইজারল্যান্ডের সংস্থায় কাজ করতে-করতে রাজনীতিতে পা দেন। তিনিও দক্ষ প্রশাসক। তাছাড়া জেলার আমলাদের গুডবুকে রয়েছেন। এছাড়া হেমন্ত রজক পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি ছিলেন। মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর ঘনিষ্ঠ। মন্ত্রী নিজে তাঁকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের পদ থেকে পদত্যাগ করিয়ে জেলা পরিষদে প্রার্থী করেন। প্রশাসক হিসাবেও তাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে দল সব কিছু বিচার করেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে জেলার ‘মুখ’কে বাছবেন। যাতে বিদায়ী সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর পুনরাবৃত্তি আর না হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.