Advertisement
Advertisement

তাড়িয়ে দিয়েছে সন্তানরা, স্থানীয় যুবকদের হাত ধরেই বাঁচার পথ পেলেন বৃদ্ধ

যার কেউ নেই, তার বোধহয় ঈশ্বর আছে!

Own children left them, but some unknown human beings sheltered these old people
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 11, 2017 10:54 am
  • Updated:September 20, 2019 12:20 pm

ধীমান রায়, কাটোয়া: বার্ধক্যের পাশাপাশি শরীরে নানা রোগ বাসা বেধেছে। কর্মক্ষমতা আর নেই। তাই সংসারের ‘বোঝা’ বুড়ো বাবাকে আগেই তাড়িয়ে দিয়েছিল ছেলে। এখানে সেখানে ঘুরে কোনওরকমে কাটাচ্ছিলেন। তারপর তিনি মেয়ের কাছে ঠাঁই পান। মাস দেড়েক নিজের কাছে রেখেছিল মেয়ে। কিন্তু মেয়েও আর বাবার ভরণপোষণে রাজি নয়। অতএব ফের ঠিকানা রাস্তা।

[যৌনপল্লির কচিকাঁচাদের সঙ্গে প্রথম বিবাহবার্ষিকী উদযাপন এই দম্পতির]

Advertisement

কাটোয়ার দাঁইহাট রেলস্টেশনে অভুক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন অশীতিপর মানুষটি। তাঁকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। তাঁরাই এখন দেখাশোনা করছেন শঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের (৮৩)। ওই আশ্রয়দাতা যুবকরাই এখন বৃদ্ধের সন্তান ও পরিত্রাতা। জানা গিয়েছে তাঁর বাড়ি মন্তেশ্বর থানা এলাকায়। এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। স্ত্রী ২০০৮ সালে মারা গিয়েছেন। ছেলে হাওড়ায় চাকরি করেন। সেখানেই থাকেন। মেয়ে থাকেন মন্তেশ্বরের গদ্দারপাড়ায়। ওই বৃদ্ধ কোন্নগরে একটি কাপড় কলে চাকরি করতেন। অনেক বছর আগেই সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো কাজ করে কোনওভাবে সংসার চালাতেন। শেষে কর্মক্ষমতা হারিয়ে যায়। ছেলের কাছে গঞ্জনা, অপমানের জেরে মাস দুয়েক আগে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কিন্তু সেই দরজাও এবার বন্ধ হয়ে যায়।

Advertisement

[পুরনো আক্রোশের জের, বউমার কান কেটে নিল শাশুড়ি!]

দু’চোখ ভরা জলে শঙ্করবাবু বলেন, “আগে ছেলের বাড়িতেই থাকতাম। স্ত্রী গত হওয়ার পর আমায় ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয় ছেলে। তখন নিজে কোনওরকমে কাজ করে পেট চালিয়েছি। মেয়েরবাড়িতে যাওয়ার পর মেয়ে দেড় মাস রেখে আমায় বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।” একটু থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ফের তিনি শুরু করেন। বলেন, “মেয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার পর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলাম। পকেটে পয়সা ছিল না। হেঁটে হেঁটে মন্তেশ্বর থেকে তিনদিন আগে দাঁইহাট স্টেশনে আসি।” তারপরই তিনি স্থানীয় যুবকদের নজরে পড়েন। শেষ পর্যন্ত বুড়ো বয়সে একটু আশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়।

[মাদকচক্রের পর্দাফাঁস, রেভ পার্টির আগে পার্ক স্ট্রিটের নাইটক্লাবের ডিজে-সহ ধৃত ৩]

দাঁইহাটের বাসিন্দা শুভেন্দু দাস, সুরজ দেবনাথরা জানান, দাঁইহাট স্টেশনে শঙ্কর মুখোপাধ্যায়কে দেখতে পেয়ে তাঁরা এগিয়ে যান। চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা হয়। এমনকী বৃদ্ধের জন্য বন্দোবস্ত করা হয় একটি ঘরের। স্থানীয় বাসিন্দা স্নেহাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈকত দাসরা বলেন, “আমরা চাঁদা তুলে বৃদ্ধের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেছি। তাঁর ছেলে-মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হচ্ছে। যদি তাঁরা বাবাকে নিয়ে যান তো ভাল, নাহলে আমরাই শঙ্করবাবুর দায়িত্ব নেব।” যা শুনে চোখের জল আর থামে না শঙ্করবাবুর। অশীতিপর মানুষটি যেন এতদিনে ভরসা পেলেন। সেই আবেগ নিয়ে বলেন, “১৩ দিন একপ্রকার অনাহারে ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে স্বর্গ পেয়েছি। এই ছেলেরা আমার জন্য যা করছে তা নিজের সন্তানদের কাছে কোনওদিন পাইনি।”

ছবি: জয়ন্ত দাস

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ