Advertisement
Advertisement
Pahalgam Terror Attack

‘সত্যমেলার মাঠে আর ছক্কা হাঁকাবে না’, পহেলগাঁওয়ে নিহত পুরুলিয়ার মণীশের স্মৃতিতে চোখে জল বন্ধুদের

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁজরা পুরুলিয়ার মণীশ।

Pahalgam Terror Attack: reaction of Purulia's Manish Mishra's friends
Published by: Sayani Sen
  • Posted:April 23, 2025 7:10 pm
  • Updated:April 23, 2025 7:10 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সত্যমেলার মাঠে ডিউজ বলে ছক্কা হাঁকাতেন মণীশ। আবার যখন দরকার পড়ত ক্রিজে টিকে থাকার, তখন পিচ কামড়ে এক প্রান্তে নিজের উইকেট আগলে রাখতেন। শুধু সিঙ্গেল নিয়ে। নিজের জীবনেও কখনও ঝোড়ো ইনিংস খেলতেন। আবার কখনও সিঙ্গেলের মতোই। কোনও সময় এক-দু পা পিছিয়ে। এভাবেই সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে নিজের কেরিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কাস্টম ডিউটি, বেসরকারি ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। তারপর কেন্দ্রের গোয়েন্দা দপ্তরের ডিএসপি। স্বপ্ন ছিল এসপি র‍্যাঙ্ক। কিন্তু ধরে রাখতে পারলেন না জীবনের উইকেট। অবিশ্বাস্যভাবে আউট হয়ে গেলেন ক্রিকেট মাঠ থেকে। জীবনের বৃত্ত থেকেও।

ঝালদা হিন্দি হাইস্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই মাধ্যমিক পাশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকা আইবির ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার মণীশরঞ্জন মিশ্র। হায়দরাবাদে কর্মরত ছিলেন। নিজের আদি বাড়ি পুরুলিয়ার ঝালদার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এলে মাঝে-মধ্যে ওই সত্য মাঠে ব্যাট নিয়ে নেমে পড়তেন। তিনি যে ছিলেন অলরাউন্ডার। ওপেনিং করার পাশাপাশি বল নিয়ে হাতও ঘোরাতেন। জঙ্গি হামলায় মণীশ গুলিতে ঝাঁজরা হওয়ার পর সেই স্মৃতি ভেসে আসছে ঝালদার ক্রিকেট বন্ধু থেকে তার ‘জিগরি দোস্তে’র চোখে-মুখে। ঝালদার চকবাজারের বাসিন্দা আইসক্রিম ব্যবসায়ী আদিত্য শর্মা বলেন, “মণীশ আমার থেকে অনেকটাই জুনিয়র। তবে একসঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম সত্যমেলার মাঠে। ওপেনিং করত ও। করত বোলিংও। ডিউজ বলেই আমরা ক্রিকেট খেলতাম। তখন ২৫ ওভারের ম্যাচ চলত। ব্লক মাঠ, সত্যভামা হাইস্কুলের মাঠে ম্যাচগুলো জমে উঠত। তখন ক্রিকেটে এত রান উঠত না। ধরে খেলার চল ছিল। সেই কাজটা খুব ভালোভাবে করতে পারতো মণীশ। আজ চোখের সামনে সব কিছু ভাসছে।”

Advertisement

বছরখানেক আগে তার সঙ্গে মণীশের কথা হয়েছিল ঝালদাতেই। আইবি অফিসার মণীশ জানতে পারেন যে আদিত্যর মেয়ে মাঙ্কি শর্মা হায়দরাবাদে একটি অনলাইন কেনাকাটার সংস্থায় কাজ করেন। তখন বলেছিলেন দিওয়ালিতে মাঙ্কিকে ডেকে নেবেন ফ্ল্যাটে। পার্টি হবে। তবে সময় করে উঠতে পারেননি ওই তরুণী। কথা ছিল এবারের দিওয়ালিতে সেই পার্টির। কিন্তু তা আর হল না। কথা বলতে বলতে চোখে জল চলে আসে ‘সন্তুদা’র। আদিত্য বাবুকে মণীশ সন্তুদা বলেই ডাকতেন।

মণীশের আরেক ছোটবেলাকার বন্ধু মনোজ কুমার রুঙটা। একসাথে ঝালদা হিন্দি হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন তাঁরা। তবে উচ্চশিক্ষার জন্য মণীশ রাঁচিতে চলে যান। কিন্তু মনোজ ছিলেন ঝালদাতেই। যোগাযোগ ছিল সর্বদা। এমনকি এখনও। দু’দিন আগেও ফোন করে জানিয়েছিলেন পরিবার নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে এসেছেন। মনোজের কথায়, “সেই ছেলেবেলা থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সপ্তাহে আমাদের কথা হবে না তা হয়নি। সাধারণভাবে দু’দিন অন্তর আমাদের কথা হবেই।” তবে গত রবিবারই যে শেষ কথা হবে তা ভাবতে পারেননি মনোজ। এই কথা বলতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। তাঁর কথায়, “স্বপ্ন ছিল আমার বন্ধু একদিন এসপি হবে। সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছিল। কিন্তু থেমে গেল তার সিঁড়ি ভাঙার চাকা।”
তাঁদের পড়শি সন্তোষ চালক বলেন, “মণীশকে কোলে-পিঠে বড় করে তুলেছিলাম। ছেলেটাকে এভাবে জঙ্গিরা মেরে দিল ভাবতে পারছি না।” কথা জড়িয়ে যায় তাঁর। এমনই বাকরুদ্ধ ঝালদাও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement