চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বাঘের পর এবার বেঘোরে প্রাণ যেতে বসেছিল এক প্যাঙ্গোলিনের। এখানেও বন দপ্তরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সালানপুরের আল্লাডি গ্রামে। রাতের অন্ধকারে আল্লাডি গ্রামের কিছু মানুষ অদ্ভুত জীবকে দেখে ভয় পেয়ে পাথর ছুঁড়ে দেয়। মুখে আঘাত পেয়ে মরমর অবস্থা হয়েছিল জীবটির। গ্রামের অন্য কয়েকজন যুবক প্যাঙ্গোলিনটিকে উদ্ধার করে ও বন দপ্তরের অফিসে দিয়ে আসে। উদ্ধরাকারীদের অভিযোগ, খবর পেয়েও প্যাঙ্গোলিনটি নিতে আসেনি বন দপ্তর। বাধ্য হয়ে গ্রামের বাসিন্দারাই রাত এগারোটার সময় প্যাঙ্গোলিন বা বনরুই প্রজাতির প্রাণীটিকে রেঞ্জ অফিসারের ঘরে দিয়ে আসে। শুক্রবার রাতে সেবা শুশ্রুষা করে শনিবার প্যাঙ্গোলিনটিকে পাঠানো হয় দুর্গাপুর বন দপ্তরের অফিসে।
স্থানীয় দেন্দুয়া শিব মন্দিরের কাছে দুটি প্যাঙ্গোলিনকে একসঙ্গে দেখা যায় একটি গলির মধ্যে। ওই জীব দুটিকে দেখতে পেয়ে এলোপাথাড়ি পাথর ছুঁড়ে দেয় প্রত্যক্ষদর্শীরা। পাথর গিয়ে লাগে পুরুষ প্যাঙ্গোলিনের মুখে। গায়ে শক্ত আঁশের কারণে পাথরের আঘাত রুখে দিলেও মুখে চোট পায়। তখনই নিস্তেজ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্যাঙ্গোলিনটি। এই সময় সঙ্গিনী প্যাঙ্গোলিনটি পালিয়ে যায় ঝোপের মধ্যে। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় দোকানি কানন সাউ জানান, খবর পয়ে রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে তিনি ছুটে যান। দেখেন পড়ে আছে অদ্ভুতদর্শন জীবটি। তারপর আহত প্যাঙ্গোলিনকে জল দেন। খবর যায় রূপনারায়ণপুর রেঞ্জ অফিসে। অভিযোগ, খবর পেয়েও সময়মতো আসেননি রেঞ্জ অফিসার। তারপর বাধ্য হয়েই বস্তায় ভরে আহত প্যাঙ্গোলিনকে অফিসে দিয়ে আসা হয়।
আসানসোল রেঞ্জ অফিসার পঞ্চানন রক্ষিত বলেন, শুক্রবার নীলের পুজো থাকায় শিব মন্দিরের কাছে লোকজনের ভিড় অন্যদিনের তুলনায় বেশি ছিল। তারাই দেখতে পেয়ে ওই কাণ্ডটি ঘটায়। গ্রামের একাংশ প্যাঙ্গোলিনটিকে তাঁর কাছে নিয়ে আসে। তবে বন দপ্তর ঘটনাস্থলে যায়নি, এ অভিযোগ ঠিক নয়। খবর পেয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল তখনই তাঁরা পৌঁছে দিয়ে যায়। মেয়ে প্যাঙ্গোলিনটিকে ঝোপ থেকে উদ্ধার করা যায়নি। নাহলে আহত পুরুষ প্যাঙ্গোলিনকে সুস্থ করে ঝোপের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। এভাবেই বের করা যেতে পারে মেয়ে প্যাঙ্গোলিনটিকে। ওই বিরলপ্রজাতির প্রাণীটির সুরক্ষার জন্য এটুকু করতেই হবে বলে জানান রেঞ্জ অফিসার।
উল্লেখ্য, প্যাঙ্গোলিন শক্ত আঁশযুক্ত ও স্তন্যপায়ী ছোট্ট প্রাণী। বৈশিষ্ট্য হল বাঘ-সিংহের মতো শিকারি জন্তুরা আক্রমণ করলে এরা দ্রুত নিজেদের গুটিয়ে বলের আকৃতি ধারণ করে। এভাবে শিকারি প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচলেও পাচারকারীদের হাত থেকে রেহাই মিলছে না প্যাঙ্গোলিনের। এশিয়া ও আফ্রিকায় দেখা মেলে প্যাঙ্গোলিনের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.