সোমনাথ পাল, বনগাঁ: চিকিৎসায় গাফিলতিতে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ। ধুন্ধুমার কাণ্ড উত্তর ২৪ পরগনা বনগাঁয়। শহরের একটি নার্সিংহোম ও এক চিকিৎসকের চেম্বারে তুমুল ভাঙচুর চালালেন রোগীর বাড়ির লোকেরা। পুলিশের সঙ্গেও তাঁদের একপ্রস্ত ধস্তাধস্তি হয়। ঘটনায় ২ জনকে আটক করেছে বনগাঁ থানার পুলিশ। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, নার্সিংহোমের অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো ও ভুল চিকিৎসার কারণেই মারা গিয়েছেন ওই প্রসূতি।
[রেজিনগরে বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত্যু যুবকের, আহত তৃণমূল প্রার্থী-সহ ২]
মৃত প্রসূতির নাম দীপা রায়। বাড়ি বনগাঁর গাঁড়াপোতা এলাকায় ভরতপুরে। দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হয়েছিলেন বছর চব্বিশের ওই তরুণী। তাঁর চিকিৎসা করছিলেন বিপদভঞ্জন বিশ্বাস নামে বনগাঁ শহরের এক চিকিৎসক। প্রসবেরও আর বেশি দেরি ছিল না। ওই তরুণীকে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। পরিবারের লোকের জানিয়েছেন, গত ৯ এপ্রিল দীপাদেবীর যোনিদ্বার থেকে আচমকাই রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তড়িঘড়ি নিয়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। আলট্রাসোনোগ্রাফি করে চিকিৎসক বিপদভঞ্জন বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, গর্ভের শিশুটি মারা গিয়েছে। গর্ভপাতের জন্য ওই প্রসূতিকে হাসপাতালে ভরতি করতে হবে। গত মঙ্গলবার দীপাকে বনগাঁ শহরের রেডপাড়া এলাকার একটি নার্সিংহোমে ভরতি করেন পরিবারের লোকেরা। তাঁদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও ওই তরুণীর গর্ভপাত করেন নার্সিংহোমে চিকিৎসকরা। ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। গর্ভপাতের পর তুমুল রক্তক্ষরণে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই প্রসূতি। তাঁর শারীরিক অবস্থা যখন রীতিমতো সংকটজনক, তখন বাড়ির লোককে বাইরে থেকে রক্ত জোগাড় করে আনতে বলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। তাতেও অবশ্য কোনও লাভ হয়নি। শেষপর্যন্ত, মঙ্গলবার রাতে দীপাকে স্থানান্তরিত করা হয় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার ভোরে সেখানেই মারা যান তিনি।
[স্ত্রী ভেন্টিলেশনে, তবুও লড়াইয়ের ময়দানে অনুব্রত]
খবর পাওয়া মাত্রই শহরের রেডপাড়ায় এলাকার যে নার্সিংহোম দীপাকে প্রথমে ভরতি করা হয়েছে, সেই নার্সিংহোমে হাজির হন মৃতার পরিবারের লোকেরা। চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগে চলে তুমুল ভাঙচুর। নার্সিংহোমের ম্যানেজারকে মারধর করা হয়। ওই নার্সিংহোম থেকে চিকিৎসক বিপদভঞ্জন বিশ্বাসের চেম্বারে যান দীপা রায়ের পরিবারের লোকেরা। তখন অবশ্য চেম্বারে ছিলেন না তিনি। অভিযুক্ত চিকিৎসক না পেয়ে চেম্বারে ফের একপ্রস্ত ভাঙচুর চালান রোগীর পরিবারের লোকেরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বনগাঁ থানার পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সাধারণ পোশাকে ছিলেন পুলিশকর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। এমনকী, প্রথম বুঝতে না পেরে পুলিশকর্মীদেরও মারধর করা হয় অভিযোগ। কোনওমতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। ঘটনায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে।
[কেউ কথা রাখেনি, পঞ্চায়েত ভোটের আগে ক্ষোভ মৎসজীবীদের পরিবারের]
বনগাঁয় একটি বেসরকারি সংস্থা নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন দীপা রায়ের স্বামী অমিত রায়। তাঁর অভিযোগ, চিকিৎসক বিপদভঞ্জন বিশ্বাস তো ভুল চিকিৎসা তো করেইছেন, নার্সিংহোমেও গর্ভপাতে করানোর মতো পরিকাঠামো ছিল না। তা সত্ত্বেও রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রীয়ের গর্ভপাত করেছিলেন নাসিংহোমের চিকিৎসকরা। তার জেরেই মারা গিয়েছেন দীপা রায়। অভিযুক্ত নার্সিংহোমে মালিক স্বপন রায়ের অবশ্য দাবি, নার্সিংহোমের পরিকাঠামো নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রসূতিদের গর্ভপাত করানো হয়।
[৮৫ বছরেও ভোটের ময়দানে টগবগে ‘যুবক’ শৈলেন্দ্র
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.