সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ভোট বঙ্গে এ এক অন্য ছবি পুরুলিয়ায়। নেই কোনও হিংসা। নেই গুলি-বোমা, রক্ত। নেই বুথ দখল বা ছাপ্পা। বরং প্রার্থীদের রাজনৈতিক সৌজন্যতায় বুথের সামনে এ যেন ‘ভোট আড্ডা’!
শনিবার দুপুরে পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের বুড়দা-কালিমাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের (Panchayat Election) কালিমাটি হাট এমএসকে বুথে প্রার্থীদের এমন মশগুলের ছবি-ই দেখা গেল। যেখানে ভোট, রাজনীতি সরিয়ে এই ভরা বর্ষার মরশুমে বৃষ্টি না হওয়ায় চাষাবাদ নিয়ে বিলাপের কথা শোনা গেল। শোনা গেল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম হওয়ার কথা। এদিন ওই বুথের বাইরে হাজির ছিলেন ওই এলাকার ১৫ নম্বর আসনের তৃণমূল প্রার্থী অনিল কুমার সিং, বিজেপি প্রার্থী রাতু সিং মুড়া, এসইউসিআই প্রার্থী শম্ভু সিং বাবু, বাম- কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সন্তোষ কুমার সিং মুড়া ও আরেক নির্দল প্রার্থী বিমল সিং মুড়া। কেন্দ্রীয় বাহিনী বিএসএফ জওয়ানদের সামনেই চলছিল তাদের ‘ভোট আড্ডা’। সেই আড্ডা থেকেই তারা খোঁজ নিচ্ছিলেন বুথে ভোটের হার কত।
ওই বুথে মোট ৭৪৭ ভোটার। তবে ধীর গতিতেই ভোট হচ্ছিল। তবে এই নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে কোন অসন্তোষ ছিল না। বাম কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সন্তোষকুমার সিং মুড়া বলেন, “১৯৭৮ সাল থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচন হচ্ছে। আমাদের এখানে কোনও বুথে কোনও হিংসার ছবি এযাবৎ দেখা যায়নি। এই ট্র্যাডিশন আমরা ধরে রাখতে চাই। রাজনীতিতে আমাদের মত যাই হোক না কেন। ভ্রাতৃত্ববোধকে ধরে রাখতে চাই। আমরা তো সবাই একই গ্রামের। একে অপরের আত্মীয়, পরিচিত।” আর বোধহয় সেই কারণেই ভোটাররাও রীতিমতো উৎসবের আবহে ভোট দিচ্ছেন। নতুন শাড়ি পরে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন। ওই আসনের আরেক নির্দল প্রার্থী বিমল সিং মুড়া, তৃণমূল প্রার্থী অনিল কুমার সিং বলেন, “এত হিংসা করে কী হবে বলুন? মানুষের পঞ্চায়েত হোক তাতে তো সকলের সুবিধা। সবাই কাজ পাবেন। সবার উপকার হবে। এইসব নিয়েই আমাদের কথাবার্তা চলছে।”
একদিকে যখন প্রার্থীদের ভোট আড্ডা। তখন ভোটের লাইনের পাশেই ছেলে-মেয়েরা খেলায় মেতে উঠেছে । এই বাঘমুন্ডির কুশলডি প্রাইমারি স্কুলের ৪৯ নম্বর বুথে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলারা তো কুড়মালি ভাষায় গানও গাইছিলেন। কুশলডি গ্রামের লতা মাহাতো একেবারে নতুন কাপড়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর কথায়, “ভোট পরব বলে কথা। নতুন কাপড় না পরলে হবে।” বাঘমুন্ডির মাঠা নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসা মুনিবেড়া গ্রামের রিম্পা মাহাতো বলেন, “এক ঘণ্টার বেশি দাঁড়িয়ে আছি। দীর্ঘ লাইনে ভোট দিতে বোধহয় সন্ধে হয়ে যাবে। ভাগ্যিস ঘরের কাজকর্ম সেরে এসেছিলাম।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.