BREAKING NEWS

৯ চৈত্র  ১৪২৯  শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

বাংলায় আশ্রয় নেওয়া ব্লগারকে খুনের ছক ছিল ধৃত জঙ্গিদের

Published by: Sangbad Pratidin Digital |    Posted: November 22, 2017 8:58 am|    Updated: September 23, 2019 12:11 pm

Planning to kill blogger! 2 suspect terrorists sheltered in city for several days

স্টাফ রিপোর্টার: মুক্তমনা ব্লগার হত্যার পাশাপাশি জেলবন্দি আনসারুল্লা বাংলা টিমের জঙ্গিনেতাদের ছাড়ানোর ছক ছিল ধৃত দুই আল কায়দা জঙ্গি রিয়াজুল এবং সামশাদের। খুলনার ব্লগার ফারুক সাদিকের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেওয়া ব্লগার সানিউর রহমানকে গোপনে হত্যার প্রস্তুতি নিয়েছিল ধৃতরা। কলকাতা স্টেশন থেকে ধরা পড়া দুই জঙ্গিকে জেরা করে বুধবার বেলায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ-এর তদন্তকারীরা। মৌলবাদীদের ভয়ে বেশ কয়েকমাস আগে কলকাতার লাগোয়া শহরতলিতে এসে আশ্রয় নিয়েছে সানিউর।

ধৃতদের কাছে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ টাকা কোথা থেকে এল, কে বা কারা তা সরবরাহ করেছিল তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দুই জঙ্গির পিছনে পুরোপুরি মদত ছিল বিদেশি শক্তির। আল কায়দার যোগসূত্র উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। এখানকার কয়েকটি অস্বীকৃত মাদ্রাসার সঙ্গেও তাদের একাধিকবার বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের কথা হয়েছিল বলে খবর। বাংলাদেশে র‌্যাবের কড়াকড়ির জেরে সীমান্তপারের শহরকে বেছে নিয়ে মডিউল গুছিয়ে নেওয়ার কাজ করছিল এই জঙ্গিরা। তদন্তকারীরা সামশাদের সঙ্গে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের যোগও পেয়েছে তারা। পাকিস্তানে গিয়ে প্রশিক্ষণও পেয়েছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। গোটা ঘটনার কথা জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাকেও। যোগাযোগ করা হয়েছে বাংলাদেশের র‌্যাবের সঙ্গেও। বৈধ ভিসা-পাসপোর্ট নিয়ে দেড় বছর আগে ভারতে ঢোকে সামশাদ মিঞা ও রিয়াজুল ইসলামরা। ভারতে ঢোকার পর হায়দরাবাদের একটি কসাই খানায় কসাইয়ের কাজে যুক্ত হয় দু’জনে।

[বড়সড় নাশকতার ছক বানচাল, শহরে ধৃত ২ সন্দেহভাজন জঙ্গি-সহ ৩]

দু’জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই, হায়দরাবাদ ও বেঙ্গালুরু ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাচি, পাটনা ও কলকাতায় নজর রাখার জন্য। শুধু নজর রাখাই নয়, সম্ভাব্য টার্গেট ঠিক করা থেকে বিস্ফোরক তৈরির জন্য রাসায়নিক জোগাড়ের কাজও দেওয়া হয় তাদের। এই ছয় এলাকার বেশ কিছু রাসায়নিকের দোকানে গিয়ে সামশাদ ও রিয়াজুল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, পটাশিয়াম ক্লোরেট-সহ কয়েকটি রাসায়নিকের সন্ধান করে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে, কলকাতাকে ঘাঁটি বানিয়ে সেখান থেকে স্লিপার সেল তৈরি ও সেখানের নিয়োগের কাজের দায়িত্বও দেওয়া হয়।
এই সব দায়িত্বই দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর তরফে। এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আল কায়দার সরাসরি যোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সামশাদ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তার এই মাথাকেও কাজে লাগাতে চেয়েছিল আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)। সেই মতো হায়দরাবাদে গিয়ে হার্ডডিস্কের প্রশিক্ষণও নেয় সে। ধৃতদের মূল লক্ষ্যই ছিল জেএমবি ও এটিবির যে সদস্যরা জেলে রয়েছে তাদের বের করা। তার জন্যই এরা অস্ত্র সংগ্রহের কাজ করছিল। সেই ঘটনার তদন্তে নেমেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে বসিরহাটে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা মনোতোষ দে। এই মনোতোষের বিষয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক সন্দেহ। কারণ এই ব্যক্তি বসিরহাটের বাসিন্দাই নন। তাঁর আসল বাড়ি ইছাপুর বলে জানা গিয়েছে। বুধবার সকালে বসিরহাটের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভবানীপুরের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে মনোতোষের স্ত্রী ও শাশুড়ির। যদিও তাঁরা জানিয়েছেন, এই ঘটনার বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানতেন না। এমনকী, মনোতোষের আসল বাড়ি কোথায় তা নিয়েও কোনও উত্তর দিতে পারেননি তাঁরা। দেড় বছর আগে বিয়ে করে তাঁরা বসিরহাটে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু কেন দেড়বছর ধরে কেন মনোতোষ সম্পর্কে কোনও তথ্য জানতে পারেননি স্ত্রী ও শাশুড়ি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আদৌ এই তথ্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে ধন্ধে তদন্তকারীরা।

সূত্রের খবর, ধর্মতলা চত্বরে একটি চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে ‘ব্রেক-থ্রু’ পায় পুলিশ। তার আগে পর্যন্ত পুলিশের কাছে শুধু গোটা ঘটনাটি ছিল অন্ধকারের মতো। প্রথম পুলিশ জানতে পারে দেড় বছর আগে ভারতে ঢুকেছে আল কায়দার দুই সদস্য। সেই মতো বিভিন্ন জায়গায় জাল বিছোতে শুরু করে পুলিশ। সামান্য চুরি থেকে খুনের ঘটনায় রাজ্যের প্রায় সব অপরাধের সঙ্গে যুক্তদের বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করে পুলিশ। সেই মতোই ধর্মতলা চত্বরের চুরির ঘটনায় রিয়াজুল নামে এক ব্যক্তির গ্রেপ্তারি পু্‌লিশকে অনেক বড় মাইলেজ দেয়। তদন্তে নেমে পুলিশ যখন রিয়াজুলের এরাজ্যে কোনও ঠিকানার সন্ধান পায়নি তখনই সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে। এরপর দফায় দফায় জেরা করে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে পুলিশ।

পুজোর আগেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তাঁদের কাছে খবর আসে যে, বাংলাদেশি আল কায়দার জঙ্গিরা যাতায়াত করছে কলকাতায়। পুজো ও অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের সময় ঝুঁকি না নিয়ে শহরের প্রত্যেকটি জায়গায় কড়া নজরদারি শুরু হয়। গত মাসের শেষের দিক থেকে শহরের প্রত্যেকটি হোটেল, স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে তল্লাশি চালানো হচ্ছিল। দিন চারেক আগে মোবাইলের সূত্র ধরে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, বসিরহাটের মনোতোষ দে তাদের অস্ত্র সরবরাহ করতে আসছে। সেই মতোই জাল পাতে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে