নন্দন দত্ত, সিউড়ি: মহম্মদবাজার কাণ্ডে শাসকদলের মন পেতে পুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ উঠল। অভিযুক্ত ১০,০৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করতে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি গঠন করল জেলা পুলিশ। যারা এখনও পর্যন্ত মোট ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি যারা বিরোধী দলের হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে মহম্মদবাজারে বিরোধী দলের থেকে ২১টি পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ও পঞ্চায়েতের ৯০টি আসনের প্রার্থীরা কার্যত এলাকা ছাড়া। বিরোধীদের অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করানোর নির্দেশ মানছে না জেলা পুলিশ। যদিও জেলা পুলিশকর্তাদের দাবি, তাঁরা প্রতিটি অভিযোগের একশো শতাংশ পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে শাসকদলের দাবি, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসন তার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে।
গত শনিবার ৭ এপ্রিল বিজেপি সহ বিরোধীরা দশ হাজার লোকের মিছিল মনোনয়ন জমা দিতে যায়। সে সময় মহম্মদবাজার ব্লক ঘিরে রাখা তৃণমূলের সমর্থদের সঙ্গে বোমা গুলির লড়াই শুরু হয়। বিরোধীদের সংখ্যা বেশি থাকায় কার্যত পিছু হটে শাসকদলের সমর্থকেরা। তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অভিযোগ করেন, পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে মহম্মদবাজার ব্লক দখল করে বিজেপি। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার দাঁড়িয়ে থেকে মাওবাদীদের দিয়ে বিরোধীদের মনোনয়ন পেশের সুবিধা করে দেন। এই অভিযোগে সক্রিয় হয় জেলা পুলিশ। তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘাতের কথা উল্লেখ করে ১০,০৫৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করে। তাদের মধ্যে মোট ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে পুলিশ। যারা বেশীরভাগই বিজেপির প্রার্থী ও তার প্রস্তাবক। এদিকে বুধবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশন জেলায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয়। তারপরেই অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার সুবিমল পাল, ডিএসপি ডিএন্ডটি, নানুরের সিআই তথা মহম্মদবাজারের প্রাক্তন ওসি দেবাশিস ঘোষ ও বর্তমান ওসি মাধবচন্দ্র মণ্ডলকে নিয়ে কমিটি গঠন করেন।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, শাসক দলের হয়ে পুলিশ এবার আমাদের প্রার্থী থেকে সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি হুমকি দিচ্ছে। শাসকদলের মন পেতেই এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে উর্দিধারী তৃণমূল কর্মীরা। তাই সন্ত্রাস রুখতে কর্মী-সমর্থকদের একজোটে থাকতে বলা হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘প্রথমে দুষ্কৃতী, পরে পুলিশ দিয়ে বিজেপিকে আটকানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। আমরা প্রার্থীদের তাই নিরাপদে রেখে এসেছি। কারণ পুলিশ বেছে বেছে কর্মী ও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করছে। তাঁর দাবি, জেলবন্দি করেও মহম্মদবাজারে কর্মীদের আটকানো যাবে না। ভোটপর্বের শেষে আমরা প্রার্থীদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেব।’ যদিও তৃণমূলের জেলা-সহ সভাপতি অভিজিত সিং বলেন, ‘বহিরাগত সশস্ত্র মাওবাদীরা এসে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে। প্রশাসনের দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন করানোর। তাই তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যা পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেটা তাদের বিষয়। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করছি।’
ছবি- বাসুদেব ঘোষ
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.