দীপঙ্কর মণ্ডল: ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগে তদন্তের পথে রাজ্য সরকার। ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এই খবর কারিগরি শিক্ষা দপ্তর জানে। তারপরও দপ্তর এই বিষয়ে উদাসীন বলে অভিযোগ। পুলিশকে এখনও জানানো হয়নি। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “কারিগরি শিক্ষা আমার দপ্তর নয়। পলিটেকনিকে প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ে না জেনে কিছু বলব না।” ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই পরীক্ষা দিয়েছে হাজার হাজার পলিটেকনিক পড়ুয়া। প্রশ্ন ফাঁসের ফলে সাধারণ পড়ুয়াদের একটি বড় অংশ যে মেধার নিরিখে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়বে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন। এই ইস্যুতে তিনি জানিয়েছেন, “প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
[ দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য, সর্বস্ব লুট করে চলন্ত ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলা হল যাত্রীকে ]
১২ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পলিটেকনিকের পরীক্ষা হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়বর্ষ মিলিয়ে লক্ষাধিক ছাত্র—ছাত্রী পরীক্ষায় বসে। ২১ ডিসেম্বর ছিল প্রথম বর্ষের রসায়নের পরীক্ষা। এই প্রশ্নটি ফাঁস হয়েছে। নির্ধারিত দিনের এক সপ্তাহ আগে প্রশ্নটি ‘সাজেশান’ নাম নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়ায়। আগে থেকে জেনে যাওয়া প্রশ্নে পড়ুয়াদের একটি অংশ পরীক্ষা দেয়। বাকি অংশ অবশ্য নিজেদের প্রস্তুতি মতো পরীক্ষা দিয়েছে। প্রশ্ন জেনে এবং না জেনে পরীক্ষা দেওয়া দু’দল পড়ুয়ার প্রাপ্ত নম্বরে বড়সড় তফাত থাকবে বলে মনে করছে শিক্ষামহল। বছর দু’য়েক আগে আইটিআইয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তদন্তে নেমে হুগলি থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি। কারিগরি শিক্ষা দপ্তরের তৎকালীন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস এক সপ্তাহ পরে ফের পরীক্ষা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই দপ্তরেই ফের প্রশ্ন ফাঁসের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “পরীক্ষা ব্যবস্থায় সবসময় তিনটে করে প্রশ্নের সেট থাকে। পরীক্ষা স্থগিত হলে আরও দু’টি সেট থেকে যে কোনও একটি বেছে নেওয়া হয়। ছাপতে খুব বেশি সময় লাগে না।” প্রায় একই সময়ে এই দপ্তর থেকে কুকুরের মুখ বসানো অ্যাডমিট প্রকাশ করা হয়েছিল। তা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। তদন্তে এক ছাত্রের যুক্ত থাকার কথা জানা যায়। কম বয়স ও অনলাইনে অনভিজ্ঞতার কারণে ভুল হয়েছে ভেবে ক্ষমা করা হয় ছাত্রটিকে।
[ মদের দোকান বন্ধ করতে ছবি এঁকে খুদেদের অভিনব প্রতিবাদ ]
চলতি মাসে প্রশ্ন ফাঁসের জেরে পলিটেকনিক পরীক্ষা কি ফের নেওয়া হবে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। কারিগরি শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, প্রশ্ন ফাঁসের খবর জানার পর বিভাগীয় তদন্ত হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে সেই কাজ এগোয়নি। কাউকে ডেকে জেরা করাও হয়নি। জানা গিয়েছে, ২৭ ডিসেম্বর পরীক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে নিউটাউনে কারিগরি ভবনে ডাকা হয়েছে। এই খবরও জানেন না বলে দাবি করেছেন দপ্তরের মন্ত্রী। এতবড় ঘটনা দপ্তরের মন্ত্রী জানেন না দাবি করায় অনেক প্রশ্ন উঠেছে। পূর্ণেন্দুবাবু জেনেশুনেই বিষয়টি গোপন করছেন, না কি দপ্তরের আধিকারিকরাই তাঁকে জানাননি? এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, “দপ্তরে গিয়ে খবর নেব। তারপর আইনি যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেব।”
[ বিয়ে রুখতে ৪ কিমি হেঁটে থানায় অভিযোগ নাবালিকার ]