চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায় আসানসোল: রয়েছে ইতিহাস। রয়েছে ঐতিহ্য। তবুও ভগ্নদশায় জরাজীর্ণ মানিকেশ্বরধাম। কিন্তু পরম্পরায় ঘাটতি নেই। কয়েক শতক প্রাচীন অষ্টনায়িকা দুর্গাপুজো আজও হয় ধুমধাম করেই। আর্থিক সামর্থ্য না থাকলেও ভিক্ষাবৃত্তি করেই উমা বন্দনার ব্যবস্থা করেন সেবাইত পূর্ণিমা চক্রবর্তী।
[ঢাকের তালে মাতোয়ারা ভুবন, ঢাকির গ্রামে অদ্ভুত শূন্যতা]
আসানসোল পুর নিগমের ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের শেষপ্রান্তে রয়েছে এই মানিকেশ্বরধাম। প্রায় আড়াইশো বছর আগে স্থানীয় পাটমোহনা গ্রামের বাসিন্দা রজনীকান্ত ব্রহ্মচারী স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মানিকেশ্বর ধামে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জনশ্রুতি, তৎকালীন সময়ে কাশীপুরের রাজা শঙ্করদয়াল সিংহ এই শিবস্থানে চৈত্রের দুপুরে, গাছে একজোড়া কদম ফুল দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এই ঘটনাই তাঁর কাছে শিবের মাহাত্ম্য বলে মনে হয়েছিল। এরপরই কাশীপুরের রাজা ওই মন্দিরের তৎকালীন সেবাইতকে ৯৯ বিঘা জমি দান করেন ও একটি শিব মন্দির বানিয়ে দেন। সেই থেকেই সৃষ্টি মানিকেশ্বরধামের। মানিকশ্বেরে শুধু শিব নেই, রয়েছে অষ্টনায়িকা দুর্গাও। প্রতিবছর ধুমধাম করে হয় দুর্গাপুজো। সপ্তমী এবং নবমীতে হয় অন্নভোগ। দশমীতে দই-চিড়ে আর একাদশীতে বিসর্জন। তিনদিন ধরে খিচুড়ি ভোগ খান গ্রামের কয়েকশো মানুষ।
[শুধু গঙ্গার তীরে নয়, উমার আগমন টেমসের ধারেও]
দুর্গাপুজো চালানো সহজ নয়, অনেক অর্থের প্রয়োজন। এই মন্দির যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সম্পর্কে তাঁর নাতবউ হন এই পূর্ণিমাদেবী। জরাজীর্ণ মন্দির সংস্কার করতে সেবাইত পূর্ণিমা চক্রবর্তী রীতিমতো হিমশিম খান। এমন অবস্থায় দশভুজার আরাধনা বিশাল ব্যাপার। একসময় স্থানীয় জমিদাররা পুজোর জন্য অনুদান দিতেন। এখন এসবের আর বালাই নেই। মানিকেশ্বরের নিজস্ব সম্পত্তি কিছু বেহাত হয়েছে। কিছু জমিজমা চলে গিয়েছে নদী গর্ভে। পূর্বপুরুষদের দুর্গাপুজো চালু রাখতে জুনুট সালোনি ভালাডিয়া গ্রামে আঁচল পেতে ঘুরেঘুরে বেড়ান সহায়-সম্বলহীন বিধবা মহিলা। দু-দশ টাকা যে যা দেন তাই নিয়ে পুজার জোগাড় হয়ে যায়। দুই মেয়ে বন্দনা ও অর্চনাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি চাল-আলুও আদায় করে বেড়ান। এত টানাটানির মধ্যে কীভাবে পুজোর পাগলামো এখনও বজায় রেখেছেন? বৃদ্ধার সহাস্য জবাব, সব মায়ের ইচ্ছা। তাঁর বিশ্বাস, সারা বছর যতই অভাব থাক না কেন, মা দুর্গা নিজেই নিজের পুজোর খরচ ঠিক বের করে নেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.