পলাশ পাত্র, তেহট্ট: পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় শহিদ হয়েছেন নদিয়ার সুদীপ বিশ্বাস৷ তাঁর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার৷ শোকার্ত পরিজনদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন সুদীপের বোন৷ শহিদ জওয়ানের বোন ঝুম্পা বলেন, ‘‘কনভয়ে এতজন জওয়ান ছিল৷ তা সত্ত্বেও যে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল, তা নেওয়া হয়নি। গাফিলতি ছিল। ওই জায়গায় এর আগেও মানুষ মারা গিয়েছে। সেনারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে শহিদ হল ঠিকই। কিন্তু আমাদের বুকটা তো খালি হল।’’
১৪ ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত হয়ে ওঠে বরফের আস্তরণে ঢাকা উপত্যকা৷ পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে হামলা চালায় জইশ-ই-মহম্মদের আত্মঘাতী জঙ্গি৷ শহিদ হন অন্তত ৪৪ জন৷ তাঁদের মধ্যেই ছিলেন নদিয়ার বাসিন্দা সেনা জওয়ান সুদীপ বিশ্বাস৷ বাবা, মা এবং বোনের সঙ্গে ছোট থেকে বেড়ে উঠেছিলেন সুদীপ৷ বয়সের পার্থক্য বেশি না থাকায় বোন ঝুম্পাই ছিলেন সুদীপের কাছের বন্ধু৷ আট বছর আগে হাঁসপুকুরিয়ার পাশের গ্রাম চকবিহারীতে ঝুম্পার বিয়ে হয়। আপাতত হাঁসপুকুরিয়ার তিলি পাড়ার বাড়িতে রয়েছেন তিনি। সুদীপের মৃত্যুর পর থেকেই বাড়িতে সবসময় প্রতিবেশী-শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড়৷ সুদীপের স্মৃতি তাড়া করে বেড়াচ্ছে ঝুম্পাকে৷ কঠোর বাস্তব এখনও মানতে পারেননি সুদীপের বাবা-মা৷ চোখের জল মুছতে মুছতে বারবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন ঝুম্পা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখন দেখছি কীভাবে ধাক্কা মারল গাড়িটা। তখন দেখিনি। গাফিলতি ছিল তো বটেই। আড়াই হাজারের বেশি ফোর্স আসছে। যদি সবাইকে উড়িয়ে দিত। তাহলে কতজন মারা যেত? কত মায়ের কোল খালি হত? আমার দাদাকে চাই। কিন্তু আর তো ফিরে পাব না।’’ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন ঝুম্পা। বিয়ের কথাবার্তা চলছিল সুদীপের৷ তাই চলছিল বাড়ি সংস্কারের কাজ৷ সদ্য ঢালাই হওয়া বাড়ির বাঁশ, কাঠের দিকে তাকিয়ে ঝুম্পা বলেন, ‘‘ফোনে দাদা বলল বাড়িতে প্লাস্টারের পর রং করা হবে। তারপর বিয়ে করব। ওর আসার কথা ছিল ফাল্গুনের শেষে। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল সব। ওর জীবনের কোন স্বপ্নপূরণ হল না।’’ ঝুম্পা আরও বলেন, ‘‘উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফল হয়েছিল দাদার৷ অভাবের কারণে কলেজে পড়াশোনা করতে পারেনি। ওর শখ ছিল কলেজে পড়ার। আমার বিয়ে দেয়। এরপর চাকরি পেল। বাড়ি করল। দাদার ইচ্ছে ছিল চাকরি পেয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচবে।’’
বাবা-মার বয়স হয়েছে৷ তাই সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সুদীপ৷ ছেলের মৃত্যুর পর অথৈ জলে পড়েছিল গোটা বিশ্বাস পরিবার৷ এই পরিস্থিতিতে বুধবারই সুদীপের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থ সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন তিনি৷ একথা শুনে শোকের মাঝে বাঁচার অক্সিজেন পেয়েছেন সুদীপের বাবা-মা৷ তবে ছেলের মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তাঁরাও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.