Advertisement
Advertisement

Breaking News

Purulia

দু হাতই অকেজো, বাঁ পায়ে লিখে মাধ্যমিক দিল পুরুলিয়ার খেরোয়াল

খেরোয়ালের অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রশংসা করছেন সবাই।

Purulia boy oversomes disability, sits for Madhyamik exams। Sangbad Pratidin

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী খেরোয়াল হেমব্রম। প্রতিদিন চিত্র

Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:February 2, 2024 8:49 pm
  • Updated:February 2, 2024 9:20 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দুহাতের সব আঙুলই বেঁকে গিয়েছে। ডান হাত ঝুলিয়ে রাখতে পারলেও বাঁ হাত বুকের কাছে। সেভাবে নড়াচড়া করা যায় না। তাই পা-ই ভরসা। সেই বাঁ পায়ে লিখেই মাধ্যমিক দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী খেরোয়াল হেমব্রম। তার বাড়ি পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়তলির আড়শা ব্লকের সিরকাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের কলাবনিতে।       

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বাঁ পায়ে লিখে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেছে খেরোয়াল। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রশংসা করছেন সবাই। জীবনযুদ্ধে জিততেই জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় বাঁ পায়ে দুআঙুলের ফাঁকে কলম রেখে নিজের শরীর বেঁকিয়ে মাথা নিচু করে বাংলা পরীক্ষা দিয়েছে ওই আদিবাসী পড়ুয়া। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তার ইচ্ছা শক্তির জন্য তাকে বাড়তি ৪৫ মিনিট সময় দিচ্ছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। দুহাতের সব আঙুলের মতো ওই পড়ুয়ার মুখও বাঁকা। ভালোভাবে কথাও বলতে পারে না। তার মধ্যেই সে ইশারায় হাসি দিয়ে জানিয়েছে, প্রথম পরীক্ষা তার খারাপ হয়নি।  

Advertisement

[আরও পড়ুন: টেস্টে ফেল, অন্যের অ্যাডমিট কার্ড জাল করে মাধ্যমিকে বসে পাকড়াও পরীক্ষার্থী]

সিরকাবাদ হাইস্কুলের ওই ছাত্রের পরীক্ষার আসন পড়েছে আড়শা ব্লকের রাঙামাটি স্বামী শ্রদ্ধানন্দ বিদ্যাপীঠে। খেরোয়ালের স্কুল থেকে বাড়ির দূরত্ব প্রায় ১৫ কিমি। তাই পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হোস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই হোস্টেল থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছে খেরোয়াল। পরীক্ষা কেন্দ্রের একটা ঘরে বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবারই আড়শা পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসন যৌথভাবে তাকে গাড়িতে করে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে কিছু অর্থ সাহায্যও করেন তাঁরা। 

Advertisement

কিন্তু এমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কেন? খেরোয়ালের পরিবার জানিয়েছে, জন্মের পাঁচ দিন পর জন্ডিসে আক্রান্ত হয় সে। সিরকাবাদ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে তাকে পুরুলিয়ায় রেফার করে দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসা চলতে চলতে তার হাতের আঙুল গুটিয়ে যায়। মুখ বেঁকে যায়। অকেজো হয়ে যায় দুটি হাত। এর পর চিকিৎসার জন্য বোকারো, রাঁচি, কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। কিন্তু হাল ছাড়েনি তার পরিবার। পড়াশোনার জন্য কলাবনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় । মা ভারতী হেমব্রমের চেষ্টাতেই সাত বছর বয়স থেকে বাঁ পায়ে লেখা শুরু করে খেরোয়াল। আর এখন পাতার পর পাতা অনায়াসেই লিখে দেয় সে। তাই পায়ে লিখে মাধ্যমিকে অবতীর্ণ হয়েছে সে। চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার পুরুলিয়ার ডিস্ট্রিক্ট নোডাল অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য কুনাল সেন বলেন, ” ওই ছাত্রের ইচ্ছাশক্তিকে তারিফ করতেই হবে। তাকে কুর্নিশ জানাই। ”  

খাতায় কলমে ওই ছাত্র ৯০% প্রতিবন্ধী। রাজ্যের তরফে ভাতাও মেলে। কিন্তু আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই পরিবারে। বাবা- মা দিনমজুরের কাজ করে কোনওভাবে সংসার চালিয়ে খেরোয়ালকে পড়িয়ে যাচ্ছেন। পাঁচ ভাই-বোনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। ফলে বই, খাতা, কলম কেনাও ভীষণ সমস্যার। তার বাবা অজিত হেমব্রম বলেন, ” হাজার শারীরিক প্ৰতিবন্ধকতার পরেও ছেলের ইচ্ছাশক্তির কথা ভেবে ওর লেখাপড়ার জন্য আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।” লড়াই-ই বটে! তবে সাইকেলে চাপিয়ে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, তার লেখাপড়া এমনকি তার স্কুলে মিড ডে মিল খাইয়ে দেওয়ার কাজে তার সহপাঠীরা সাহায্য করে। এভাবেই প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় উড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে খেরোয়াল। 

দেখুন ভিডিও:

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ