Advertisement
Advertisement

Breaking News

উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়ে ছেলেরা ‘মৃত’! বিশ্বাসই হচ্ছে না পুরুলিয়ার ২ শ্রমিক পরিবারের

ডেথ সার্টিফিকেটই পাননি কেউ।

Purulia families lament death of family members in Uttarakhand disaster |SangbadPratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 24, 2021 9:28 pm
  • Updated:February 24, 2021 9:43 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বাড়ি থেকেই দেখা যায় অযোধ্যা পাহাড় (Ayodhya hill)। সেই পাহাড় বেয়েও নেমে আসে হড়পা বান। তাঁরা জানেন, পাহাড়ি বান কতটা ভয়াবহ। কিন্তু সপ্তাহ তিনেক আগে উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand)চামোলি হিমবাহে ফাটলের জেরে তপোবন এলাকার হড়পা বানের সঙ্গে এর বিশেষ মিল নেই। তাই চামোলির হড়পা বানে পরিবারের দুই ছেলে যে প্রাণ হারিয়েছে, তা বিশ্বাসই হয় না। ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করতে যাওয়া পুরুলিয়ার আড়শার বাগানডির দুই পরিযায়ী শুভঙ্কর তন্তুবায় ও অশ্বিনী তন্তুবায় নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি তাঁদের ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করে উত্তরাখণ্ড সরকার। আর তাতেই যেন আকাশ থেকে পড়ে তন্তুবায় পরিবার। বাগানডির ওই দুই পরিবার ছেলেদের মৃত বলে মানতে নারাজ।

নিখোঁজ শ্রমিকদের ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করলেও ডেথ সার্টিফিকেট মেলেনি। এমনকী নিখোঁজ দুই বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারকে কোনও কিছুই জানানো হয়নি উত্তরাখণ্ড সরকারের তরফে। কোনও খবর আসেনি রাজ্য সরকার তথা পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের তরফেও। ফলে অথৈ জলে দুই পরিবার। ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা, কীভাবে তাঁরা পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করবেন, সেটাই বুঝতে পারছেন না। ফলে ওই দুই যুবকের ছবি নিয়েই অপেক্ষায় বসে আছে ওই দুই পরিবারl তাদের বিশ্বাস, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবেই। এই আশায় চোখের জল মুছে যাচ্ছেন বছর কুড়ি-পঁচিশের শুভঙ্কর, অশ্বিনীর বৃদ্ধ বাবা-মা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: বেনজির! ভোটের কাজ চেয়ে সটান জেলাশাসকের দপ্তরে শিক্ষিকা]

কারণ সরকারের বিধিতেই রয়েছে, নিখোঁজ হওয়ার সাত বছর পর কোনো হদিস না মিললে তবেই মৃত বলে ঘোষণা করা যায়। কিন্তু উত্তরাখণ্ডের চামোলির ঘটনাকে ‘ব্যতিক্রমী’ বলে ১৯৬৯ সালের জন্ম-মৃত্যু নথিভুক্তকরণের আইনের উল্লেখ করে তাদের ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করে। তবে এসব আইন-বিধির কথা জানে না ওই দুই পরিবার। তারা চান দুই তরতাজা যুবকের প্রাণ। তাই শুভঙ্কর তন্তুবায়ের দাদা রবীন্দ্রনাথ তন্তুবায় বলেন, “এভাবে মৃত ঘোষণা করে দিলেই হবে? আমাদের তো কোন কিছুই জানানো হয়নিl হাতে পায়নি মৃত ঘোষণা করা বিজ্ঞপ্তিও। মারা গেছে এটা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারব না। ভাইদের ফিরিয়ে দিতে হবেl মৃত ঘোষণা করেছে কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেট কোথায়?” মুখ দিয়ে কথা সরছে না শুভঙ্করের বৃদ্ধ বাবা ভজহরি তন্তুবায়ের। বাকরুদ্ধ মা ভারতী দেবীর চোখ দিয়ে শুধু জল গড়িয়ে যাচ্ছে। একই ছবি অশ্বিনী তন্তুবায় বাড়িতেও। চোখ, মুখ শুকনো হয়ে আছে তার স্ত্রী বনিতা দেবীরl এক বছরের ছেলে হিমাংশু যেন তার বাবাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ভ্যাকসিনের কথা বলবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা, রাজ্য পূর্ণ হল ১ লক্ষের টিকা কোটা]

আড়শার বাগানডির একেবারে পাশাপাশি এই দুই পরিবারের বাড়ি। সামান্য চাষবাস আর দিনমজুরির অর্থে কোন ভাবে সংসার চলে। তাই পেটের টানে উত্তরাখণ্ডে ঠিকাদার সংস্থার অধীনে ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন এই দুই পরিযায়ী। উত্তরাখণ্ডের হিমবাহ ধসের জলস্রোত এই পাহাড়ের হড়পা বানের চেয়েও যে ভয়ঙ্কর তা জানা ছিল না ওই দুই পরিবারের। ওই জলস্রোতই দুই পরিবারের সংসারকে যে তছনছ করে দেবে তা ভাবতেও পারছেন না তারা। অশ্বিনীর দাদা সহদেব তন্তুবায় বলেন, “কোথা থেকে কি হয়ে গেলl ছেলেগুলোকে খুঁজেই পাওয়া গেল না।এখনই ‘মৃত’ বলে দিল। কিছুতেই আমরা মেনে নেব না।” তবে এই দুই পরিবারের কয়েকজন সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের চামোলির তপোবনে গিয়ে দেখে এসেছেন সেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়-র ছবি। সেখানেই তাদের রক্ত ও নখের নমুনা নেওয়া হয় ডিএনএ টেস্ট-র জন্য। পরে যদি তাদের মৃতদেহ মেলে! কিন্ত অযোধ্যা পাহাড় কোলের বাগানডির মন পড়ে রয়েছে চামোলি তপোবনের সেই হিমবাহের খাঁজেই।

ছবি ও ভিডিও: সুনিতা সিং।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ