রিংকি দাস ভট্টাচার্য: দেবী আসবেন নৌকায়। শস্য-শ্যামলা হবে বঙ্গ। আর নৌকা ভাসার জন্য পুজোর সময় নদ-নদী টলটলে জলে ভরে যাওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা। দুর্গাপুজোর শুরু থেকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত রাজ্য বৃষ্টিতে ভাসবে, এমন আশঙ্কা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এমনিতেই বর্ষা এসেছে দেরিতে। ফলে বিদায়ের ক্ষণও বিলম্বিত। কাজেই বঙ্গজীবনের সবচেয়ে বড় উৎসব এবার বৃষ্টিমুখর হতেই পারে।
[আজও চারদিন নহবতের মূর্ছনায় মেতে ওঠে শহরের প্রথম বারোয়ারি পুজো]
বস্তুত, ক্যালেন্ডারের মোতাবেক বর্ষা বিদায়ের সময় ১০ অক্টোবর। এদিকে পুজো সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে। অবস্থা যা, তাতে মহিষাসুর বধ করলেও বর্ষাসুরের কাছে এ বছর দেবী দুর্গার বিড়ম্বনার সম্ভাবনা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। আর সেই আশঙ্কায় অনুঘটকের কাজ করছে একটি পরিসংখ্যান। সাধারণত ৮-১০ অক্টোবর দক্ষিণবঙ্গ থেকে বিদায় নেয় বর্ষা। এবার পুজো পড়েছে বর্ষা বিদায়ের সেই সন্ধিক্ষণেই। চলতি বছর ২৭-৩০ সেপ্টেম্বর পুজোর দিন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, (এবছর এই দিনে অষ্টমী) কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছিল ২০.১ মিলিমিটার। ওই বছরই ৩০ সেপ্টেম্বর (অর্থাৎ এ বছর দশমী) বৃষ্টি হয়েছিল ৪৪.১ মিমি। ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর (এ বছর পঞ্চমী) শহর ভেসেছিল ২৩ মিমি বৃষ্টিতে। ২০১৫ সালে ওই দিনগুলো শুকনো ছিল শহর। তবে গত বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ২৫—৩০ সেপ্টেম্বর কমবেশি প্রায় রোজই বৃষ্টি হয়েছে মহানগরে। এই বিপর্যয়ের যে পুনরাবৃত্তি হবে না, তার কোনও ‘গ্যারান্টি’ দিতে পারছেন না হাওয়া অফিসের কর্তারা। বরং একান্তে কারও কারও হুঁশিয়ারি, শরতের নীল আকাশের নিচে দেবীর আবাহনের পরিবর্তে রেনকোট পরেই হয়তো কাটাতে হবে অষ্টমীর দুপুর।
[প্রতিবন্ধকতা বাধা নয়, এক হাতেই মৃন্ময়ী দশভুজা গড়ছেন জগদীশ]
আসলে বর্ষার চালচিত্রে বদল হওয়ায় পুজোর মুখে এবং পুজোর সময় বৃষ্টি হওয়ার এমন আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। মৌসম ভবনের হিসাব অনুযায়ী, এ রাজে্য বর্ষা ঢোকার কথা ৮ জুন। বিদায় নেওয়ার কথা ১০ অক্টোবর। বর্ষার এই ক্যালেন্ডার তৈরি হয়েছিল প্রায় ৪০ বছর আগে। কিন্তু তার মধ্যে কলকাতায় বদলে গিয়েছে পুজোর আবহ। বদলে গিয়েছে পুজোর সময়ের পরিবেশও। দেরি করে এখন বর্ষা আসছে। ফলে থেকে যাচ্ছে বেশিদিন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আগে বর্ষার বেশিটাই হতে যেত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে। ভাদ্রের মাঝামাঝি কাটিয়ে বাংলা থেকে বিদায় নিত বর্ষা। কিন্তু নতুন পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, বর্ষা পিছিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। একই সঙ্গে হয়েছে দীর্ঘায়তও। গত এক দশক ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবহাওয়াবিদরা দেখেছেন, বর্ষা থেকে যাচ্ছে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। গোটা দেশেই বর্ষার বিলম্বিত লয়। চলতি বছর পুজো সেপ্টেম্বরে হওয়ায় শরতের রোদ মেঘে ঢেকে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই। আবহাওয়ার চালচিত্রের উপর কড়া নজর রেখে পুজো উদ্যোক্তারা সাফ বুঝে গিয়েছেন, বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা না দিতে পারলে সব আয়োজনই মাটি। তার প্রস্তুতিও পুরোদমে সেরে ফেলেছেন অনেকেই। বৃষ্টির কথা ভেবে কারও থিম জল। কেউ আবার এমন সব সামগ্রী ব্যবহার করছে, যে বৃষ্টিতে তার পোয়া বারো। সৌন্দর্য বাড়বে বই কমবে না।