দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: সারা দেশজুড়ে যখন NRC ও CAB নিয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভা উত্তাল তখন নিজের দেশে পরবাসীর মতো বসবাস করছেন পোলবা ব্লকের ৯২টি পরিবার। অভিযোগ এমনই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভোটের সময় সব রাজনৈতিক দলগুলোই ফায়দা তোলার জন্য পরিবারগুলির কাছে গিয়ে ভোট ভিক্ষা করে। কিন্তু ভোট মিটে গেলে তাদের দিকে আর ফিরেও তাকায় না। এদের ভোটেই রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা নির্বাচিত হয়ে আসেন। অথচ এই ৯২টা পরিবারই গত ২০১১ সাল থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কোনও আর্থিক সাহায্য বা সুযোগ সুবিধা পান না।
সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের শাসকদল ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচী পালন করছে। আর এই কর্মসূচী পালন করতে গিয়েই চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার পোলবা দাদপুর ব্লকের পোলবা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাপানতলা গ্রামের পরিবারগুলির বঞ্চনার কথা জানতে পারেন। এই পরিবারগুলির মানুষজনের কথা শুনে তিনি রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে যান। পরিবারগুলির অধিকাংশ সদস্যেরই বয়স ৫০ থেকে ৭০-এর মধ্যে। কারওর বয়স আবার তারও বেশি। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই অসিত মজুমদার এই ৯২টি পরিবারের কথা হুগলির জেলাশাসককে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই পরিবারের সমস্যা সমাধানের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি।
স্বাধীনতার পর ভারতের এই সভ্য সমাজ থেকে যেন অনেক দূরে রয়েছে এই পরিবারগুলি। ঠিক যেন একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। বর্তমানে এই পরিবারগুলির সরকারি সাহায্য ছাড়া তাদের একমাত্র বেঁচে থাকার পথ হল দিন মজুরি করা। অনেকেরই মাটির বাড়ির দেওয়াল ধসে পড়ছে। টালির চালের ফুটো দিয়ে জল পড়ে প্রায়শই বিছানাপত্র ভিজে যায়। কিন্তু এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য তাদের ত্রিপল তো দূরের কথা, সামান্য প্ল্যাস্টিক পর্যন্ত মেলেনি। গ্রামের চারপাশে বিষাক্ত পোকামাকড়, সাপের উপদ্রবে যে কোনও সময় বিপদ আসতে পারে। বছরের পর বছর এই সাপ পোকামাকড়ের সঙ্গে বাস করছে পরিবারগুলো। চরম দুর্দশাগ্রস্ত এই পরিবারগুলোর না আছে রেশন কার্ড, না আছে বিপিএল তালিকায় নাম।
২০১১ সালে স্যোশিও ইকনমিক এ্যান্ড কাস্ট সেনসাসের ভিত্তিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। আর তারই জেরে এদের জীবনে দুর্দশা নেমে আসে। অথচ এদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছে। আর সেই ভোট প্রয়োগ করেই এরা জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে নিয়ে আসেন। এরা ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে যে কোনও যোজনা বা স্বাস্থ্যসাথীর কোনও সুবিধাই এরা পান না। বৃহস্পতিবার বিধায়ক অসিত মজুমদার নিজে এই গ্রামটি ঘুরে দেখেন এবং পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর কি এই অসহায় দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলি জীবনযাত্রার পরিবর্তন হবে? না কি অভিশাপ এদের জীবনকে এক অনিশ্চিতের দিকে ঠেলে দেবে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.