সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: বেরা বাড়ির বাইরে লোকে লোকারণ্য৷ সকলেই কথা বলছিলেন খুব নিচু স্বরে৷ একটু কান পাততেই কারণটা জানা গেল৷ গত ২৬ এপ্রিল পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরতরে বিদায় নিয়েছে সকলের আদরের বাড়ির ১৬ বছরের সারমেয় ডাবলু৷ তাই মন ভাল নেই কারও৷ ডাবলুর দুরন্তপনার কথা মনে পড়লেই ঘন ঘন চোখ মুছে চলেছেন তার প্রিয়জনেরা৷ পুরোহিত মশাইয়ের শাস্ত্র অনুযায়ী শনিবার ডাবলুর পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করলেন বাগনানের এনডি ব্লকের বাড়িতে৷
হিন্দু মতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান চলল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত৷ শ্রাদ্ধশান্তির পর শনিবার রাতেই সম্পন্ন হয়েছে নিয়মভঙ্গের পর্ব৷ এই পারলৌকিক ক্রিয়াতে ব্রাহ্মণ ভোজন ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন ও ডাবলুর অগণিত প্রিয়জনেরা উপস্থিত ছিলেন৷ ডাবলুর দাদা শান্তনু বেরা জানালেন, ডাবলুর মতো ‘প্রিয়জনে’র জন্য এইটুকু করতে পারাটা কিছুই নয়৷ তার মত প্রভুভক্তি ও কর্তব্যপরায়ণতা বর্তমান মনুষ্য সমাজে বড়ই দুর্লভ৷ ডাবলু ছিল স্পেনিয়াল জাতের কুকুর৷ আজ থেকে ১৬ বছর আগে মাধ্যমিক পাস করায় উপহার হিসাবে সদ্যোজাত ডাবলুকে বোন স্বাতীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন শান্তনুবাবু৷ তারপর থেকে সকলের অগোচরে ডাবলু একটু একটু করে এই বাড়ির সকলের আত্মার আত্মীয় হয়ে যায়৷
শান্তনুবাবু একটি দিনের জন্যেও ডাবলুকে নিজের ভাই ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারেননি৷ একইভাবে শান্তনুবাবুর মা প্রীতিকা বেরাও তাকে সন্তানস্নেহেই লালন পালন করে এসেছেন৷ তিনিই এদিন উপবাসী থেকে নিজের হাতে ডাবলুর শ্রাদ্ধ-শান্তির কাজ সামলেছেন৷ পুরোহিত মশাইদের মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে ডাবলুর উদ্দেশে সজল নয়নে পিণ্ডদান করেছেন৷ শান্তনুবাবুর প্রায় তিন বছরের কন্যা জিভি কাঁদতে কাঁদতে এ ঘর থেকে ও ঘরে খুঁজে বেড়িয়েছে তার প্রিয় ‘ডাবলু আঙ্কলকে।’ কিন্তু তার প্রিয় ডাবলু আঙ্কলের ঠিকানা কেউই দিতে পারেনি ছোট্ট জিভিকে। শুধু ঘরের মিউজিক সিস্টেম থেকে অশ্রুত সুরে উত্তর ভেসে এসেছে, ‘তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে৷’