Advertisement
Advertisement
হাতির হানায় মৃত বৃদ্ধ

‘পালিয়ে যা’, ক্ষিপ্ত হাতির শুঁড়ে আছাড় খাওয়ার আগে ছেলেকে সাবধান করলেন বৃদ্ধ

উত্যক্ত করার 'শাস্তি', দাঁতালের হামলায় মৃত্যু বৃদ্ধের।

Restless elephant,being agitated by mob killed old man in Purulia
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:December 19, 2019 6:28 pm
  • Updated:December 19, 2019 7:00 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: অবিরাম ইট–পাথর ছোঁড়া, মাটি কাটার যন্ত্র নিয়ে তাড়া। রাতভর উত্যক্ত করার ‘শাস্তি’ দিল হাজারিবাগের দলে থাকা এক দাঁতাল। পুরুলিয়ার ঝালদা বনাঞ্চলের খামার বিট এলাকায় বাইক তাড়া করে এক বৃদ্ধকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়ে ফেলল হাতিটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। চোখের সামনে বাবার এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি দেখতে হলেও কোনওক্রমে নিজে প্রাণে বাঁচেন শিক্ষক।

prl-ele-murder
মৃত মথুর লোহার

বৃহস্পতিবার ভোররাতে ঝালদা বনাঞ্চলের খামার বিটের ভাকুয়াডি গ্রামে দুই বাইক আরোহীকে দেখে তাড়া করে ঝাড়খণ্ডের ওই বুনো হাতি। দাঁতালের তাড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উলটে যায় তাঁদের বাইক। হাতির নাগাল থেকে বাঁচতে তখন বাইকে থাকা বৃদ্ধ বাবাকে কাঁধে নিয়ে পালাতে যান হুগলির কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষক সুভাষ লোহার। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। সেসময় ছেলের কাছ থেকে বাবাকে ছিনিয়ে নিয়ে শুঁড়ে পেঁচিয়ে ‘খুন’ করে ক্ষিপ্ত দাঁতালটি। এদিন ভোররাতে হাড়হিম করা ঘটনার সাক্ষী রইলেন শিক্ষক সুভাষ লোহার।

Advertisement

[আরও পড়ুন: শীতে উত্তাপ বাড়াচ্ছে সবজির দর, পিঁয়াজের পর দামবৃদ্ধির তালিকায় আলু]

তখন ভোর চারটে। কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষক সুভাষকে কর্মস্থলে ছাড়তে বাইকে যাচ্ছিলেন বাবা মথুর লোহার। পথে দাঁতালের দলকে দেখে ঘাবড়ে যান তাঁরা। বাইক ঘুরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্ষিপ্ত দাঁতাল তাকে উত্যক্ত করার বদলা নিতে ওই বাইকের পিছনেই ধাওয়া করে। বাইক উলটে পড়ে যায়। হাতিও দিকভ্রান্ত হয়ে পথ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু বৃদ্ধ ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতেই বিপদ একেবারে শিয়রে এসে দাঁড়ায়। দাঁতালটি তেড়ে এসে বৃদ্ধকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে। শিক্ষক সুভাষ লোহার বলেন, “বাবার ওই চিৎকারটাই কাল হল। যে টিনের দরজার ঘরে ঢোকার জন্য ছুটে আসছিলাম। তা আর পঞ্চাশ মিটার দূরে ছিল। বাবাকে শুঁড়ে টেনে নেওয়ার সময় তিনি শুধু বলেছিলেন – ‘তুই পালিয়ে যা।’ এখন শুধু এই কথাটাই কানে বাজছে।”

Advertisement

এই ঘটনায় বনদপ্তরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ভোর পাঁচটা থেকে দুপুর প্রায় একটা পর্যন্ত মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। বিক্ষোভ তুলতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের রোষের মুখে পড়ে পুলিশ ও বনদপ্তরের রেঞ্জার অমিয় বিকাশ পালও। পরে বিডিও রাজকুমার বিশ্বাসের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ঘটনাস্থলে যান পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোও। পরে ঘটনার তদন্তে যান পুরুলিয়ার ডিএফও রামপ্রসাদ বদানা। তিনি স্পষ্টই বলেন, “হাতিকে উত্যক্ত করা হয়েছে। মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে হাতিদের তাড়া করা হয়। নাহলে হাতি এমন আচরণ করত না। ঘটনার তদন্তের পর আমরা অভিযোগ করব। মৃতের পরিবার যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পায়, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

[আরও পড়ুন: ব্যান্ডেলে তৃণমূল কার্যালয়ে আগুন, অভিযোগের তির বিজেপির দিকে]

কয়েকদিন আগে বলরামপুরের পাঁড়দ্দা গ্রামেও দলমার দাঁতালের দলকে ইট–পাথর ছুঁড়ে বিরক্ত করায় লোকশিল্পী এক যুবককে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়ে মারে একটি হাতি।ঝাড়খণ্ড লাগোয়া গ্রাম ভাকুয়াডি দীর্ঘদিন ধরেই হাজারিবাগের বুনো হাতির দলের করিডর। ফসল পেকে ওঠার এই মরশুমে কিছুদিন ধরে এই খামার বিটে রয়েছে একাধিক হাতি। এই দলটিকে গত বুধবার সন্ধের পর থেকে খুঁজেই পায়নি বনদপ্তর। রাতের বেলায় ভাকুয়াডি গ্রামের পাশে ভসুডি গ্রামে হানা দেয় এই দল। সেখানে একের পর এক জমির ফসল তছনছ করতে থাকে। ফসল বাঁচাতে এলাকার বাসিন্দারা হাতির দলের উপর ইট–পাথর নিয়ে পালটা হামলা করে বলে অভিযোগ। মাটি কাটার যন্ত্র নিয়েও তাড়া করা হয়। হাতির দল সেইসময় পিছু হঠলেও, এক গ্রামবাসীকে সামনে পেয়ে তাড়া করে। দ্রুত ঘরে ঢুকে কোনওক্রমে বেঁচে যান ওই গ্রামবাসী।

ছবি: অমিত সিং দেও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ