অর্ণব আইচ: আর একটুও এদিক ওদিক হওয়ার জো নেই। সরকারি অস্ত্র কারখানায় প্রত্যেকটি অস্ত্রের অংশ তৈরির পর তাতে ‘মার্কিং’ করে দিচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত কোনও যন্ত্রাংশ তৈরি হলে তা নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। কোনওভাবে যাতে রাইফেল বা ছোট অস্ত্রের যন্ত্রাংশ সরকারি কারখানার বাইরে পাচার না হয়, তার জন্য অত্যন্ত কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড (ওএফবি)।
[মলয় ঘটকের নামে বিস্ফোরক অভিযোগ তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতির]
কয়েক মাস আগেই ইছাপুর রাইফেল কারখানা থেকে অস্ত্রের অংশ পাচার হয়। অভিযোগ, পরে তা তুলে দেওয়া হয় বিহারের মাওবাদীদের হাতে। এই পাচারকাণ্ডে কারখানার কর্মী শম্ভু ভট্টাচার্য ও তার সঙ্গী বিকাশ সাউকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। এর পরই ওএফবি-র পক্ষে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে বৈঠক করা হয়। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের এক কর্তা জানান, এই ধরনের ঘটনা সম্পূর্ণ অযাচিত। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকেই বিশেষ কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে বোর্ড, যাতে আর কোনও কর্মী কোনও অস্ত্র কারখানা থেকেই এই ধরনের কোনও চুরির সাহস না পায়। এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কর্মী রাইফেলের ট্রিগার, ব্যারেলের মতো অংশ কারখানার বাইরে গোপনে পাচার করত। পাচার হত ম্যাগাজিনও।
গোয়েন্দাদের অভিযোগ, অংশগুলি বিহার ও ঝাড়খণ্ডে গিয়ে তুলে দেওয়া হত মাওবাদীদের হাতে। মাওবাদীরা সেই অংশগুলি জুড়েই তৈরি করত অস্ত্র। ওএফবি-র এক কর্তা জানান, কারখানায় কোনও জিনিস নিয়ে প্রবেশ ও বের হওয়ার বিষয়েও কড়াকড়ি করা হয়েছে। একটি অস্ত্রের প্রত্যেকটি অংশে বিশেষ নম্বর ‘মার্কিং’ করা হচ্ছে। ওই নম্বর দেখেই সেগুলি জোড়া হচ্ছে। তার ফলে অতিরিক্ত কোনও অংশ বাইরে পাচারের সম্ভাবনা থাকছে না। কর্মীদের কার্যককলাপের উপরও চলছে নজরদারি।
এদিকে, সোমবার অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান সুনীলকুমার চৌরাশিয়া জানান, আরও আধুনিক মাইন নিরোধক গাড়ি তৈরির প্রস্তুতি চলছে। সম্প্রতি সুকমায় মাইন নিরোধক গাড়ি বিস্ফোরণে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে, পেটের তলায় ১০ কিলো বিস্ফোরক ও চাকায় ১৪ কিলো বিস্ফোরক বিস্ফোরণ ঘটালেও গাড়ি সহ্য করতে পারে। কিন্তু সুকমায় অনেক বড় মাপের বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তাই নতুন মাইন নিরোধক গাড়িতে বাড়ানো হচ্ছে তার সহ্যক্ষমতা, যাতে বড় ধরনের বিস্ফোরণেও কিছু না হয়।
[বিয়ের প্রস্তাব নাকচ, প্রেমিকাকে অশ্লীল মেসেজ পাঠিয়ে ধৃত যুবক]
ওএফবি-র কর্তাদের মতে, ভারতীয় সেনা এখন শত্রুদের নিধন করতে বদ্ধপরিকর। তাই আট লাখ নতুন ও অত্যাধুনিক ৭.৬২-৫১ ইনসাস রাইফলে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চার কিলোর কম হালকা এই স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলি ছুড়লে প্রাণ নিয়ে ফেরত যেতে পারবে না শত্রুরা। এর মধ্যে ৭২ হাজার রাইফেল দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বাকিগুলির মধ্যে ১ লাখ ৮৫ হাজার সরবরাহ করছে ওএফবি। সেনাদের ৩০০টি ১৩০ মিমি বন্দুক আধুনিক করে আরও কার্যকর করে তোলা হচ্ছে। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের জন্যও তৈরি করা হচ্ছে আধুনিক অস্ত্র। অন্য একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা হচ্ছে অত্যাধুনিক বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। প্রচুর সংখ্যার অস্ত্র বিদেশে রফতানিও করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ওএফবি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.