শ্রীষিতা ঘোষ: শীতের দুপুরে ধোঁয়াওঠা গরম ভাত, আর সঙ্গে দই দিয়ে ফুলকপির রোস্ট। কিংবা রাতে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে হাতে গড়া রুটি দিয়ে বিট গাজর, কড়াইশুঁটির মাখা মাখা তরকারি। এবারের শীতে আমবাঙালির ঘরে এই চিত্রটা প্রায় ব্রাত্যই হতে বসেছে। কারণ বাজারে ঢুকে শীতের সবজিতে হাত দিলেই রীতিমতো ছ্যাঁকা খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ফুলকপি, বাঁধাকপি থেকে শুরু করে বিট, গাজর, শিমের রীতিমতো দাম লাগাম ছাড়িয়েছে। যা নামার সম্ভাবনাও আপাতত নেই বলেই জানিয়েছেন সবজি বিক্রেতারা। তাই বাজারে ঢুকেও শীতের সবজি না কিনেই শুকনো মুখে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে মহানগরবাসীকে।
কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? কারণ হিসাবে হগ মার্কেট এলাকার সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রতিবারের তুলনায় এ বছর শীতে ফলন বেশ খানিকটা কম হয়েছে। তার উপর গত মাসে অসময়ের বৃষ্টি এসে সমস্ত ফলন নষ্ট করে দিয়েছে। যার জেরে শীতের সবজির দাম একধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ফলন, জোগান কম থাকায় দাম বেড়েছে চড়চড় করে। এদিকে শীতের সবজির বিক্রিতে ভাটা পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিক্রেতারাও। গ্রামের হাটের সঙ্গে খুচরো বাজারের দামেরও একটা বিরাট ফারাক দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এর পিছনে অবশ্য ফড়েদের দাপট অনেকটাই কাজ করছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কৃষি বিপণন দপ্তর সূত্রে খবর, গত বছর এই সময়ে গ্রামের হাটে শিম বিক্রি হয়েছিল দু’টাকা কেজি দরে। এবার তা হয়েছে কেজি প্রতি দশ টাকা। শহরের বাজারেই আবার সেই শিম বিক্রি হচ্ছে ত্রিশ টাকার কেজি দরে। উৎপাদন কম হওয়ায় অনেকটাই দাম বেড়ে গিয়েছে। এবার গ্রামের হাটে ছয় থেকে দশ টাকা করে ফুলকপি বিক্রি হলেও শহরের বাজারে তা প্রায় অগ্নিমূল্য। কুড়ি থেকে পঁচিশ টাকার কমে বড় সাইজের ফুলকপি মেলা দায়। ছোট মাপের ফুলকপির দাম রয়েছে দশ থেকে বারো টাকার মধ্যে। গত বছর হাটে বাঁধাকপি বিক্রি হয়েছিল কেজি প্রতি দশ টাকায়। তা এবার হাটে এক-একেকটি বিক্রি হচ্ছে দশ টাকা করে। বিট, গাজরের দামও রয়েছে তুঙ্গে। গত বছর যে বিট, গাজর ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। দাম বেড়েছে ধনেপাতা, পালংশাকেরও।
হগ মার্কেটের এক সবজি বিক্রেতা জ্ঞানপ্রসাদ হুদাইত বলেন, ‘‘শুধু শীতের সবজি নয়। এ বছর সমস্ত সবজিরই দাম বেড়েছে। আপাতত এই দাম কমারও কোনও সম্ভাবনা নেই।” রাজ্য সরকারের কৃষি বিপণন টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা পশ্চিমবঙ্গ চাষি ও ভেন্ডারস অ্যাসোসিয়েশনস-এর সভাপতি কমল দের কথায়, “অসময়ের বৃষ্টি ফসলের ক্ষতি তো করেছেই। এছাড়া হাট ও খুচরো বাজারের মধ্যেও সবজির দামের অনেকটাই ফারাক রয়েছে। হাট থেকে খুচরো বাজারে সবজি আসার এই সরবরাহ পদ্ধতির ভিতরে অসাধু ব্যবসায়ীদের দাপট রয়েছে। সেদিকে আরও বেশি নজরদারি প্রয়োজন।” কেন এমন সবজির আকাল? কৃষি বিশেষজ্ঞদের কথায়, এমনিতেই শীতের খামখেয়ালিপনায় এবছর সবজি চাষ অনেকটাই মার খেয়েছে। তার উপর এক মাস আগের অকাল বৃষ্টিতে ফুলকপি-সহ অন্যান্য সবজির ফলনে বেশ অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি এখনও পর্যন্ত সামাল দিয়ে উঠতে পারেননি চাষিরা। এদিকে নতুনভাবে যে সবজির চাষ হয়েছে, সেগুলি এখনও পর্যন্ত তোলার অবস্থায় নেই। ফলে বাজারে শীতের সবজির জোগান অনেকটাই কম রয়েছে। আর জোগান কম থাকার কারণেই দাম চড়েছে লাগামহীনভাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.