Advertisement
Advertisement

জেলায় জেলায় বিশ্বকর্মা: সংসার না চললেও পরম্পরার টানে গয়না গড়ছেন জাফর আলিরা

চাহিদার অন্ত নেই কিন্তু পারিশ্রমিক নামমাত্র।

Sad story of Gala artists of Purulia

ছবিতে শিল্মকর্মে নিমগ্ন জাফর আলি মনিহার, ছবি: সুনীতা সিং।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:September 17, 2018 7:59 pm
  • Updated:September 18, 2018 9:11 am

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মাথা গুঁজে নিপুন হাতে কখনও নকশার কাজ, কখনও গালা গলিয়ে মেয়েদের গয়না তৈরি, কখনও চুড়ির ফিনিশিং টাচ। দিনভর এভাবে পরিশ্রম করলে তবে ৫০০ টাকার কাজ হয়। পুরুলিয়ার বলরামপুরের স্টেশন রোডের জাফর আলি মনিহার। তাঁর হাতের নিপুণতায় চকমক করে শিল্পকর্ম। যেন নিজেই এক বিশ্বকর্মা! কর্মগুণে জিতে নিয়েছেন একাধিক পুরস্কার। জেলার বিশ্বকর্মায় আজ রইল সেই জাফর আলির সৃজনকথা।

পুরস্কারের সংখ্যা কর্মী জীবনের সংজ্ঞায় বদল আনতে পারেনি। তাই হাড়ভাঙা খাটুনিতে পড়েনি ছেদ। ঘোচেনি অভাব। প্রদীপের নিচেই যে নিকষ কালো অন্ধকার। তবুও বাপ-ঠাকুর্দার শিল্পকর্মকে বাঁচিয়ে রাখতে এই হাতের কাজ ছাড়তে পারেননি জাফর আলি। মাসের শেষে পকেটে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু এত বড় সংসারের হা-মুখ ভরতে তা যৎসামান্যই। তাই সংসারিক স্বচ্ছলতা আকাশকুসুম কল্পনাই থেকে গিয়েছে। তবুও দিনভর আগুনের সামনে মুখ গুঁজে গালা গলিয়ে চলেছেন জাফর। লাক্ষা থেকে উৎপাদিত গালা কিনে গেরস্থালির জিনিস গড়েন। এর বাইরে রয়েছে শো-পিস তৈরির কাজ। মহিলাদের জন্য বিবিধ নকশার গয়না। কী নেই তাঁর সৃজন সম্ভারে। হার, চুড়ি লকেটের পাশাপাশি সিঁদুরকৌটো।  কাজের বরাতের অভাব নেই। কিন্তু সেই কাজ তুলতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় তাঁকে। বলা যায় গোটা পরিবারই এই কাজে যুক্ত। ভাই আনোয়ার আলি মনিহার সবসময় দাদার কাজে সাহায্য করে যাচ্ছেন। কাজের অভাব নেই, শুধু পরিশ্রমের অনুপাতে মজুরিটাই যে কম।   হতাশা ঝরে পড়ে জাফর আলি মনিহারের গলায়। তাঁর কথায়, ‘দিনভর পরিশ্রম করলে সারাদিনে ৫০০টি টাকার কাজ হয়। আয় বড় কম। সংসার চলে না, কিন্তু জীবনের অধিকাংশ সময়ই এই কাজ করে কাটলো। তাই পেশা বদলের কথা ভাবতেই পারি না। তাছাড়া বাপ-ঠাকুর্দার কাজকে তো ধরে রাখতে হবে।’ জাফর আলি মনিহার পরম্পরাকে ধরে রাখলেও পরিবারে নতুন প্রজন্ম কিন্তু একাজ থেকে মুখ ফিরিয়েছে।  

Advertisement

Advertisement

[মুসলিমদের কাঁধে চেপে মণ্ডপে এলেন বিশ্বকর্মা, সম্প্রীতির উৎসব বাঁকুড়ায়]

 প্রায় একশ বছরেরও বেশি সময় আগে মনিহাররা রাজস্থান থেকে পুরুলিয়ার বলরামপুরে চলে আসে। সেই দলেই ছিলেন জাফর আলি মনিহারের পূর্বপুরুষরা। সেই থেকে বাংলার মাটিই মনিহারদের ঘরবাড়ি। প্রায় তিন পুরুষের বাস হয়ে গেল। এই বলরামপুর শহরে প্রচুর মারোয়াড়ি রয়েছেন। যাদের মনিহার ছাড়া চলে না। তাই জাফর আলি মনিহার বলছিলেন, ‘মাড়োয়াড়ি পরিবারের নাপিত, ঝাড়ুদার আর মনিহার ভীষনই প্রয়োজন। এখানে মারোয়াড়ি থাকায় আমাদের হাতে তৈরি অলঙ্কার বিক্রিতে কোন সমস্যা হয় না। ফলে আমাদের কোনওভাবে দিন চলে যায়।’ ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চুড়ি মেলে। ২৫০ টাকা থেকে শুরু গলার চিকের দাম। তাই পেটের টানে বাপ-ঠাকুর্দার কাছে শেখা এই শিল্পকর্মকে বাঁচাতে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেও আগুনের সামনে বসে কাজ করে যান জাফর আলি মনিহার।

[বন্ধ কারখানা, শিল্পনগরী দুর্গাপুরে ফিকে বিশ্বকর্মা পুজোর জৌলুস]

 

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ