সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: খুদে পড়ুয়াদের মধ্যে সবুজের স্বপ্ন সঞ্চারিত করার লক্ষ্য নিয়ে স্কুলের ছাদেই গড়ে তোলা হল আস্ত একটা সবজি বাগান। কী নেই সেখানে? কলমি, পুঁই, নটে, পালং-সহ বিভিন্ন রকমের শাক থেকে শুরু করে লাউ, কুমড়ো, পটল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, টমেটো, গাজর, ঢেঁড়স, বেগুন, বরবটি-সহ নানান সবজির এক অনন্য সম্ভার। এই ছাদ বাগানটি গড়ে উঠেছে আমতা থানার সোনামুই গ্রামের সোনামুই হরিসভা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে। সেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃত্রিমভাবে মাটির আস্তরণ তৈরি করে ও টবে সারা বছরই চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি, যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘কিচেন গার্ডেন’। এই বাগানটিকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন খুদে পড়ুয়াদের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই তেমনই একই সঙ্গে তাদের মধ্যে প্রশমিত হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ চেতনা। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের যৌথ পরিচর্যায় এই সবজি বাগানটি ক্রমশই শস্য-শ্যামলা হয়ে উঠছে।
[হোমওয়ার্ক না করায় সপাটে চড় শিক্ষকের, অসাড় হয়ে গেল ছাত্রের মুখমণ্ডল]
কিন্তু এত সবজি উৎপাদন করে স্কুল কর্তৃপক্ষ কী করবে? কৌতুহল নিরসন করলেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুণ খাঁ। হাসিমুখে তিনি জানালেন স্কুলের মিড-ডে মিল রান্না করতে সবজির প্রয়োজন হয়। অর্থের অভাবে সব সময় দামি সবজি কেনা সম্ভব হয় না। তাছাড়া বাজারি সবজিতে নানা রকম ক্ষতিকারক কীটনাশক থাকে, যা শিশুদের ক্ষেত্রে খুবই বিপজ্জনক। তাই স্কুলের ছাদে উৎপন্ন এই সবজি মিড-ডে মিল রান্নায় ব্যবহার করা হয়। তিনি জানান আমতা-১ পঞ্চায়েত সমিতি ও খড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েতের আন্তরিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের এই কিচেন গার্ডেনটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আমতা-১ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে গাছের বীজ দেওয়া হয়েছে এবং গাছ পরিচর্যার প্রশিক্ষণের জন্য ‘কৃষকরত্ন’ পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষক প্রশান্ত মাজিকে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। খড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে এম জি এন আর ই জি প্রকল্পের শ্রমিকদের ছাদে মাটি তোলার কাজে ব্যবহার করা হয়। তারপর গড়ে তোলা হয় এই ছাদ বাগান। তিনি আরও জানান এই সব সবজিতে কোনও প্রকার রাসায়নিক সার বা ক্ষতিকারক কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না।
[শ্বাসনালিতে আটকে মোবাইল চার্জারের পিন, সফল অস্ত্রোপচার শিশুর]
আমতা-১ বিডিও লোকনাথ সরকার স্কুল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং তাঁদের সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন। স্থানীয় বাসিন্দা পৃথ্বীশরাজ কুন্তি জানান প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যে এহেন অভিনব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এক নজির স্থাপন করেছে। সরকারি অর্থের উপরে ভরসা করে বসে না থেকে মিড-ডে মিল তৈরির জন্য স্বনির্ভর হতে চেয়েছে এই স্কুলটি। বিদ্যালয়ের ছাদ বাগানটি পরিদর্শনে আসা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অনিকেত মুখোপাধ্যায়ও এই কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, সব বিদ্যালয়ে এই ধরনের কিচেন গার্ডেন তৈরি করার প্রয়োজন আছে। শিক্ষা মানে কেবল পুঁথিগত বিদ্যালাভ নয়, শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য হল মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানো। আর সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে গ্রামীণ হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের প্রচারের আলো থেকে বহু দূরে থাকা এই বিদ্যালয়টি। আগামীদিনে এই বাগানটিকে কেন্দ্র করে স্কুল কর্তৃপক্ষের আরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।