ধীমান রায়, কাটোয়া: তিন ছেলেই আলাদা থাকেন। স্বামীও পরলোকে। গোপালের বিগ্রহকে কোলে করেই দিন কাটে ৬৪ বছরের অহল্যা ঘোষের। সেই কবে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। তারপরই বৃন্দাবন থেকে নিয়ে এসেছিলেন গোপালকে। কিন্তু গোপালকে যে একটা ঘর করে দেবেন তার জো নেই। জায়গা আছে, দলিল দস্তাবেজও আছে। সামর্থ্যও আছে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন স্থানীয়রা। ভগবানে ভরসা না রেখে তাই সোজা মহকুমা শাসকের শরণাপন্ন হলেন অহল্যাদেবী। গোপালকে কোলে করেই কাটোয়ার এসডিও-র অফিসে গিয়ে জানিয়ে এলেন, ঘর মিলছে না তাঁর গোপালের।
[ সোনার দোকানে দুঃসাহসিক ডাকাতি, ২০-২৫ ভরি গয়না নিয়ে চম্পট দুষ্কৃতীদের ]
প্রশাসনের কাছে তাঁর আরজি নিজের জায়গাতে তিনি যাতে আরাধ্যের মন্দির তৈরি করতে পারেন তার জন্য যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়া হোক। কাটোয়ার মহকুমা শাসক সৌমেন পাল বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। খতিয়ে দেখে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
[ ক্লাসরুমে মদের বোতল-চাট, ৩ দিন মালদহের স্কুলে দেদার মোচ্ছব পুলিশের ]
কাটোয়ার মুলগ্রামের বাসিন্দা অহল্যাদেবী। স্বামী সাধন ঘোষ ছিলেন পেশায় ছোট চাষি। বছর দুয়েক আগে তিনি মারা যান। অহল্যাদেবীর তিন ছেলে। তাঁরা তিনজনেই পৃথক থাকেন। স্বামীর ভিটায় ছোট একটি ঘরে বাস করেন বিধবা অহল্যাদেবী। তিনি জানিয়েছেন, ছেলেরা হয়ত মাকে নাও দেখতে পারেন এই আশঙ্কা থেকে সাধনবাবু তাঁর ভিটাবাড়ির এক শতক জায়গা তাঁর স্ত্রীকে দিয়ে গিয়েছিলেন। অহল্যাদেবী বলেন, আমি প্রথম থেকেই পুজোআচ্চা নিয়ে থাকি। স্বামীর কাছে আবদার করেছিলাম যাতে আমাকে একটি ঠাকুরঘর তৈরি করে দেন। তবে স্বামী ঠাকুরঘর নির্মাণ করতে না পারলেও জায়গা দিয়ে যান। আর জায়গাটি রাধামাধব জিউয়ের নামে দলিল করে গিয়েছেন। সেবাইত হিসাবে রাখা হয়েছে অহল্যাদেবীকে।
[ বাবা-কাকিমার পরকীয়া দেখে ফেলার ‘অপরাধ’, কাকার হাতে শ্লীলতাহানির শিকার কিশোরী ]
অহল্যাদেবী জানান, তিনি মাঝেমধ্যে বৃন্দাবনে তীর্থে যেতেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাধাকুঞ্জ থেকে একটি গোপালমুর্তি নিয়ে আসেন। ২০১৩ সালে গোপালের মুর্তি নিয়ে আসার পর থেকে পুজো করছেন। বাড়িতে গোপালের জন্য মন্দির নির্মাণ করার মনস্থ করলে আরও দু-চারজন দেবতার নামে ওই জায়গার পাশে আরও কিছুটা জায়গা দান করেন। সব মিলে ৪ শতক অর্থাৎ দু-কাঠা জায়গা রয়েছে রাধামাধবের নামে। যার সেবাইত অহল্যা ঘোষ।
[ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস, খুনের চেষ্টায় ধৃত ডাক্তারি ছাত্র ]
তিনি বলেন, ওই জায়গায় মন্দির নির্মাণ করতে গেলে গ্রামের ৬ জন ব্যক্তি আমাকে বাধা দিচ্ছে। প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে গোপালকে নিয়ে আমায় বাইরে বাইরে ঘুরতে হচ্ছে। কোনও মন্দিরে গিয়ে রাত কাটাই। যাতে গোপালের সেবা নিয়মিত হয়। এদিন আরাধ্য গোপালকে নিয়েই মহকুমাশাসকের কাছে আসেন অহল্যা ঘোষ। তাঁর একটাই আবেদন, আরাধ্যের মন্দিরটি যেন নির্মাণ করতে পারেন। মানুষ আপদে বিপদে দেবতার শরণাপন্ন হয়। কিন্তু দেবতার মাথা গোঁজার ঠাঁই জোগাড় করতে যেভাবে দৌড়াদৌড়ি করছেন বৃদ্ধা, তা চমকে দিয়েছে অনেককেই।
ছবি: জয়ন্ত দাস।