সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: ‘তাকে শ্মশানে বাস করতে হবে, অখাদ্য আহার করতে হবে, মড়ার কাপড় নিয়ে লজ্জা নিবারণ করতে হবে’। সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির কথা ভেবে একথা লিখেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি এটাও নিখেছিলেন, ‘এখন তারা ভদ্রপাড়ার কাছাকাছি এগিয়ে এসেছে কিছুটা’। তবে ঝাড়গ্রামে ঘটল একেবারে অন্যরকম ঘটনা। ভিন রাজ্য থেকে ফেরায় করোনা আতঙ্কে ওঁদের পাড়াতেই ঢুকতে দেওয়া হল না। তাই শ্মশান চত্বরেই ওঁরা সাতজন খাটালেন ত্রিপলের তাঁবু। থাকতে শুরু করলেন সেখানেই।
একদিকে দাহকার্য, অন্যদিকে জোগাড় করে আনা খাবার গোগ্রাসে খাওয়া। এই পরস্পরবিরোধী ছবি বিনপুর-২ ব্লকের কাঁকো অঞ্চলে। কাঁকোর একটি শ্মশানে সাতজন ভিন রাজ্য এবং ভিন জেলা ফেরত মানুষ এইভাবেই রয়েছেন। করোনা আবহে তাঁরা কোনও ক্রমে নিজেদের জায়গায় ফিরতে পেরেছেন ঠিকই, কিন্তু পাড়ায় তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাই কটা দিন শ্মশানেই কাটাতে হয়েছে। এদিকে, বিষয়টি জানার পর ঝাড়গ্রামের মহকুমা শাসক সুবর্ণ রায় বিডিওকে বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন । মহকুমা শাসক সুবর্ণ রায় বলেন, “বিষয়টির খবর পেয়েছি। বিডিওকে বলেছি ওঁদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।”
[আরও পড়ুন: বুলবুলের পর আমফানের দাপটেও ভাঙল বাড়ি, মাথায় হাত অসহায় মৎস্যজীবীর]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগেই কলকাতা, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, চেন্নাই থেকে বেশ কয়েক জন শ্রমিক বিনপুর-২ ব্লকের কাঁকো অঞ্চলে নিজেদের গ্রামে ফিরতে চান। গ্রামবাসীদের বাধায় তাঁদের গ্রামে থাকতে দেওয়া হয়নি। গ্রামের স্কুলেও স্থান হয়নি। করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে গ্রামের মানুষ তাঁদের গ্রামের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘরে যখন ঠাঁই হল না, ওঁরা বাধ্য হয়েই চললেন শ্মশানের দিকে। সেখানেই থাকলেন কোয়ারান্টাইনে। নাম প্রকাশ না করতে চাওয়া ওই সাতজন জানালেন, “ঘরে জায়গা নেই। তাই শ্মশানই শ্রেয়। ” তাঁরা চাইছেন প্রশাসন তাঁদের সরকারি কোয়ারান্টাইন সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা করুক।