সঞ্জীব মণ্ডল, শিলিগুড়ি: এতদিন মোবাইল, টাকা-পয়সা চুরি পর্যন্তই অপরাধ সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার সরাসরি শিশু চুরি! তাও আবার এমন গর্হিত অপরাধ করার পর শিলিগুড়ি হাসপাতাল থেকে সবার নজর এড়িয়ে সোজা ধুপগুড়িতে গিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছিল ‘চোর’। কিন্তু বুধবার রাতেই পুলিশের জালে ধরা পড়ল অপরাধী। বছর ২১-এর গৃহবধূ সবিতা গড়াই ও তার বাবা সুকুমার দত্তকে ধুপগুড়ির পূর্ব মল্লিকপাড়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে ২৫ দিনের ওই সদ্যোজাত শিশু। শিশুটিকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার মাবাইল, টাকা-পয়সা চুরির অভিযোগ নাকি রয়েছে সবিতার উপর।
মঙ্গলবার শিলিগুড়ি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসা এক প্রসূতির ২৫ দিনের পুত্রসন্তান চুরি যায়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গোটা শহর জুড়ে তোলপাড় পড়ে যাওয়ায় নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন হাসপাতাল সুপার অমিতাভ মণ্ডল। পাশাপাশি শিশু চুরির পিছনে কোন চক্র কাজ করছে, তা দেখতে তদন্তে নামে পুলিশ। সন্তানকে ফিরে না পেয়ে বুধবার হাসপাতাল সুপারের কার্যালয়ের সামনে কার্যত ধরনায় বসেন শিশুটির বাবা পেশায় টেম্পো চালক সুশান্ত সরকার। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন এলাকার বাসিন্দারা। বিক্ষোভ হয়। সুশান্তবাবু বলেন, মঙ্গলবার রাতে শিলিগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। হাসপাতালের সিসিটিভিতে ধরা পড়ে সবিতার ছবি। লাল শাড়ির ওই মহিলাকেই সন্দেহের আওতায় ফেলে পুলিশ। তারপর বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে থাকে ওই ছবি। খানাতল্লাশি করে বুধবার রাতে সন্ধান মেলে সবিতার। পুলিশি জেরায় সে জানিয়েছে, সে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শিলিগুড়ি হাসপাতালে সে ডাক্তার দেখাতে এসেছিল। সেখানেই ওই শিশুটিকে দেখে সে। নেহাত ভাল লেগেছিল বলেই ওই শিশুটিকে নিয়ে চলে আসে সে। কিন্তু পেশায় রিকশচালক বাবা সুকুমার দত্ত বিপদ বুঝে শিলিগুড়ির ভাড়াবাড়িতে তালা লাগিয়ে মেয়েকে নিয়ে ধুপগুড়িতে চলে আসেন।
সদ্যোজাতর বাবা সুশান্তবাবু জানিয়েছেন, স্ত্রী মঙ্গলবার ডাক্তার দেখাতে আসেন হাসপাতালে। সঙ্গে ছিল তাঁর কিশোরী বোন সরস্বতী। স্ত্রী ডাক্তারের কাছে গেলে শিশুটিকে সরস্বতীর কাছে দিয়ে যান। ওইসময় এক মহিলা এসে তাঁর বোনকে শিশুটিকে রোদে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। বোন তাতে রাজি হয়ে যায়। এরপর হাসপাতালের দোতলা থেকে ওই মহিলা সহ শিশু কোলে সরস্বতী আউটডোরের কাছে নেমে আসে। কিছুক্ষণ বাদে ওই মহিলা আদর করার ছলে সরস্বতীর হাত থেকে শিশুটিকে নিজের কোলে তুলে নেয়। এরপর ঘুরে আসার নাম করে শিশু কোলে ওই মহিলা সরস্বতীকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে কিছুটা দূরে কোর্ট মোড়ের দিকে যায়। সেখানে একটি ঘুগনির দোকানে ঢোকে তারা। সরস্বতীকে ঘুগনি দেওয়ার কথা বলে দোকানদারকে। এরপর ওই শিশুটিকে মায়ের কাছে দিয়ে আসার নাম করে সে চম্পট দেয়। সরস্বতী কিছুক্ষণ বাদে হাসপাতালে অআসে। তখনই জানতে পারে, ওই মহিলা শিশুটিকে ফিরিয়ে দিয়ে যায়নি। এরপরই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়। ঘুগনির দোকানদার জয় সিং রায় বলেন, শিশু কোলে এক মহিলা ও এক কিশোরী তাঁর দোকানে এসেছিল। কিছুক্ষণ পর ঘুরে আসার কথা বলে ওই মহিলা শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে চলে যায়। একটু পরে ঘুগনির টাকা না দিয়ে চলে যায় ওই কিশোরীও। শিলিগুড়ি ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (জোন-১) গৌরব লাল জানান, ঘটনার জেরে শিশুচুরির মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। সিসিটিভর ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্তে নেমে গোপন সূত্রে সন্দেহভাজনের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে পুলিশ। তারপর সেই নম্বরের টাওয়ার লোকেশন থেকে ধুপগুড়িতে সবিতার সন্ধান পাওয়া যায়।
যদিও ধৃত সবিতার বয়ানে অসঙ্গতি পেয়েছে পুলিশ। অনুমান, শিশু-চুরি চক্রর বিষয় ধামাচাপা দিতেই অন্য গল্প ফাঁদছে সবিতা। গোটা ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। আপাতত তাকে জেরা করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.