Advertisement
Advertisement

Breaking News

পুজোয় দু’দেশের মিলনমেলা হয়ে ওঠে হিলি সীমান্তের গ্রাম

উন্মুক্ত সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের ৫০টি হিন্দু পরিবার ও প্রায় ৬০টি মুসলিম পরিবারও এই পুজোয় সমানভাবে অংশ নেয়৷

Since 1953, Both Sides of Hili Border Celebrates Durga Puja Together
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 4, 2016 10:32 am
  • Updated:October 4, 2016 10:32 am

রাজা দাস: মানুষের ঢল কিংবা রং-বেরঙের আলোকসজ্জা বা জাঁকজমকের ছোঁয়া নেই৷ তবু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে অখ্যাত গ্রাম উঁচা গোবিন্দপুরের সম্প্রীতির দুর্গাপুজো প্রতি বছরের মতো এবারেও নজর কাড়ছে সীমান্ত এলাকার মানুষের কাছে৷ পুজোর কয়েকটা দিন এক ভিন্ন আনন্দে মেতে ওঠেন সীমান্ত লাগোয়া হিলির ধলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উঁচা গোবিন্দপুর গ্রামের মানুষ৷ এই পুজোয় শুধুমাত্র হিন্দুরাই অংশ নেন এমনটা নয়৷ উন্মুক্ত সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের দক্ষিণ দামোদরপুর গ্রামের ৫০টি হিন্দু পরিবার ও প্রায় ৬০টি মুসলিম পরিবারও এই পুজোয় সমানভাবে অংশ নেয়৷ যেহেতু জিরো লাইনের ঘেঁষা গ্রাম, তাই বেড়ার কড়াকড়ি নেই এখানে৷ এপার বাংলার দুর্গাপুজো দেখতে ওপার বাংলার মানুষরাও ভিড় জমান, বা তাঁরাই প্রধান দর্শনার্থী৷
ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ লাগোয়া কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে উঁচা গোবিন্দপুর সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির উদ্যোগে পরিচালিত দুর্গাপুজো এবার ৬৩ বছরে পা দিয়েছে৷ স্বাধীনতার পর থেকেই দু’দেশের সীমান্তে ভারতীয় গ্রামে হিন্দু ও মুসলিমরা একসঙ্গে পুজো করে আসছেন৷ দেশ ভাগ হওয়ার পর হিলির এই গ্রাম ভারতীয় ভূখণ্ডে যুক্ত হয়৷ নানা অত্যাচার, নানা প্রশাসনিক বাধা টপকে ভারতীয় গ্রামের তকমা পেলেও বন্দিদশা কাটেনি৷ জিরোলাইন থেকে ১৫০ মিটারের মধ্যে গ্রামটি পড়ায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে গ্রামকে ওপারে রেখেই৷ সকাল ৬.৩০টা থেকে সন্ধ্যা ৫.৩০টা পর্যন্ত ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে গ্রামের৷ সীমান্ত সুরক্ষার জন্য বন্ধ রাখা হয় গেট৷ ফলে ভারতীয় হয়েও দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন না এই গ্রামের বাসিন্দারা৷ তাই নিজের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে ১৯৫৩ সাল থেকে এই পুজোর আয়োজন হয়ে আসছে৷
আগে দু’দেশের জিরো পয়েন্টে অস্থায়ী প্যান্ডেল গড়ে পুজো হত৷ পরবর্তীতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নির্দেশে জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ২০ মিটার ভারতীয় ভূখণ্ডে সরিয়ে এনে শুরু হয় পুজো৷ এলাকাবাসীরাই চাঁদা তুলে এই পুজো চালিয়ে আসছেন৷ কোনও জাঁকজমক নেই এখানে৷ একদম গ্রাম্য পরিবেশে টিনের বেরা দেওয়া স্থায়ী চালা ঘরে গ্রামের বাসিন্দাদের সম্মিলিত উদ্যোগে এই পুজো হয়ে ওঠে দুই বাংলার মিলনকেন্দ্র৷ পুজোর ক’টা দিন আট থেকে আশি সকলেই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন৷ মণ্ডপ প্রাঙ্গণে স্থানীয় শিল্পীদের দ্বারা নাটক, কীর্তন পরিবেশিত হয়৷ এ ছাড়াও নবমীর দিন যুগিপর্ব গান পরিবেশিত হয়৷ পুজোকে কেন্দ্র করে গোবিন্দপুর বসে বিশাল মেলা৷ পুজো ও মেলা দেখতে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন৷
পুজো উপলক্ষে চার দিন বিএসএফ সময়ের তেমন কড়াকড়ি করে না৷ হিলির বিভিন্ন ক্লাবের বিগ বাজেটের পুজো দেখতে গেলেও ফিরে আসতে হবে রাত ১০টার মধ্যেই৷ এক কথায় পুজোর পাঁচটা দিন গোটা বাংলার মানুষ যখন আনন্দে মেতে উঠবে, তখন সীমান্তের এই অখ্যাত গ্রামের মানুষগুলো নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী পুজোর আয়োজন করে শুধু নিজেদের সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতেই৷ আর এভাবেই প্রচারের আলো থেকে শত দূরে থাকা জিরো পয়েন্টের উঁচা গোবিন্দপুর গ্রাম হয়ে ওঠে ভারত-বাংলাদেশের মানুষের মিলনতীর্থ৷

Advertisement

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ