পলাশ পাত্র, তেহট্ট: এক সময় দল করতে গিয়ে তাকে মাওবাদী তকমা পেতে হয়েছে। জেল খাটতে হয়েছে। অবশেষে খুনও হতে হয়েছে। ইনি হচ্ছেন করিমপুর ২-এর রাজনীতির অবিসংবাদী নেতা আনিসুর রহমান বিশ্বাস। প্রয়াত আনিসুরের বড় মেয়ে দুলুয়ারা খাতুনকেই তৃণমূল কংগ্রেস নারায়ণপুর ১ পঞ্চায়েত থেকে প্রার্থী করে। দুলুয়ারা পঞ্চায়েত ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। এ প্রসঙ্গে লড়াকু বাবার মতোই তাঁর সাফ কথা, “জিতেছি ভাল লাগছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়াই করে জিতলে আরও ভাল লাগত।”
[ভোটের আগে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে উত্তপ্ত উদয়নারায়ণপুর]
রাজনৈতিক আবহে বড় হওয়া বছর তেতাল্লিশের দুলুয়ারা। জীবনের প্রথম রাজনৈতিক লড়াইয়ে জিতে তিনি বলেন, “আজকে বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। বাবাকে অন্যায় ভাবে সিপিএমের লোকজন খুন করে। সিপিএম খুব অত্যাচার করেছে। শুধু বাবা নয়, আমাদের পরিবারের দশজন সে সময় জেল খাটে। আজকে সেই সিপিএম প্রার্থী দিতে পারছে না।” ২০১৪ সালের জুন মাসে খুন হন তৃণমূলের দু’বারের প্রাক্তন প্রধান ও করিমপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা আনিসুর বিশ্বাস। পালটা নারায়ণপুর এক পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে সিপিএমের সদস্য আবদুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয়। আনিসুর রহমান বিশ্বাসের খুনে চির প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের দিকে অভিযোগ ওঠে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সাল থেকে নারায়ণপুর ১ পঞ্চায়েত থেকে কংগ্রেসের হয়ে জয়ী হয়েছিলেন আনিসুর। ১৯৯৮ ও ২০০৮ সালে পঞ্চায়তে প্রধান হন। ২০০৩ সালে করিমপুর দুইয়ের পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা হন। ২০০৫ সালে সিপিএম তাকে মাওবাদী তকমা দেয়। একইসঙ্গে খুনের মামলায় অভিযুক্ত করে। সে সময়ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে জেল খাটতে হয় তাঁকে। ২০১৪ সালের ২৭ জুন কৃষ্ণনগরে কোর্ট থেকে হাজিরা দিয়ে ফেরার সময় বাড়ির কাছে গুলি করে, কুপিয়ে খুন করা হয় তাঁকে। এর আধঘন্টার মধ্যে নারায়ণপুর ১ পঞ্চায়েত অফিসের ভেতর ঢুকে সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য আবদুল হককে গুলি করেখু ন করা হয়।
নদিয়ায় এখনও পর্যন্ত এহেন ঘটনা ঘটেনি। দীর্ঘদিন ধরে ফাজিলনগর, নারায়ণপুর পুলিশের খাতায় অন্য ধরনের নাম। সেই খুনোখুনি, অস্থিরতা বর্তমানে আজ আর নেই। এ প্রসঙ্গে দুলুয়ারা বলেন, “এখন এলাকায় যা উন্নয়ন হয়েছে তাতে বিরোধী যেমন নেই তেমনি সেই হিংসা, রক্তারক্তি, অস্থিরতাও আর নেই। গ্রাম আজ ভাল আছে। আমি বাবার আদর্শকে সামনে রেখেই গ্রামে কাজ করব।” করিমপুর ২ এর বিডিও সত্যজিৎ কুমার জানান, ভোটে জয়ী প্রার্থী দুলুয়ারা খাতুনকে শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
[অভিভাবকের সঙ্গে শিক্ষিকার হাতাহাতি, পঠনপাঠন শিকেয় রামপুরহাটের স্কুলে]