স্টাফ রিপোর্টার: নরম রোদে গা সেকতে সেকতে কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে একটা কোয়া মুখে দিতেই বঙ্কিমবাবু বললেন-“হ্যাঁ রে আমার ওভার কোটটা বের করিস তো! ওই উলেনটা! অনেক বছর পর এমন হাড় কাঁপাচ্ছে।” সত্তর বছরের বৃদ্ধ হলেও হাড়ে এখনও তাকত কম নেই বঙ্কিমবাবুর। আর্মিতে ছিলেন। এমন এলিতেলি ঠান্ডা নয়। কাশ্মীর-হিমাচলের ঠান্ডাতেও ফিনফিনে গেঞ্জিতে কাটিয়েছেন অনায়াসে। গত বছর তো একটা ফুল সোয়েটার চাপালেই ঘামতে হত। এবার কিন্তু ঠান্ডা লাগছে বঙ্কিমবাবুর।
না শুধু বেহালার বঙ্কিমবাবুই নন। শীতে কাঁপছে গোটা বাংলা। শুক্রবার ছিল মরশুমের শীতলতম দিন। কলকাতার তাপমাত্রা নেমেছে ১১.১ ডিগ্রিতে। শনিবার সকালে তা সামাণ্য বৃদ্ধি পেয়ে ১১.৬-এর কোটায় দাঁড়িয়েছে। সেইসঙ্গে জেলাগুলিতেও চলছে হার কাঁপানো ঠান্ডার দাপট। রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে শৈতপ্রবাহের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাঁকুড়া, বহরমপুর, বর্ধমানেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে নয়ের ঘরে। কৃষ্ণনগর আরও কম– ৮.২ ডিগ্রি। পানাগড়, শ্রীনিকেতন সাতের ঘরে। সঙ্গে রয়েছে সর্বগ্রাসী কুয়াশা। “শীত এবার যা মেজাজে, তাতে ২০১৩-র রেকর্ডও ভেঙে যেতে পারে।” পর্যবেক্ষণ বিশেষজ্ঞদের। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের উপ-নির্দেশক (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কলকাতায় জানুয়ারির ঠান্ডা পড়ে মূলত উত্তর-পশ্চিমি বায়ুর সুবাদে। এখন তার সঙ্গে জুড়েছে নিখাদ উত্তুরে হাওয়া। হিমালয়ের হিম বাতাস। শীতের এই জোড়া ফলাই বাংলাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
আর এই বাড়তি অনুঘটকটির মূলে কলকাতার দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের উপর তৈরি হওয়া একটি ঘূর্ণাবর্ত। ঘূর্ণাবর্তের টানে উত্তর-পশ্চিমের কাশ্মীর-হিমাচল থেকে রাশি রাশি বরফ-শীতল বাতাস যেমন হুহু করে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকছে, তেমনই সে টেনে আনছে উত্তরের সিকিম-নেপাল-তিব্বত ঘেঁষা হিমালয়ের হিমেল হাওয়া। যা বিপুল গতিতে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে সাগর অভিমুখে দৌড়নোর পথে আরও নামিয়ে দিচ্ছে কলকাতার তাপমাত্রা। আলিপুর জানিয়েছে, শনিবার উত্তর-পশ্চিমের কাশ্মীরি বায়ুর জোরও বাড়বে। পরিণামে ঠান্ডার কামড় বাড়তে পারে।
সব মিলিয়ে শীতের ‘আকাল’ নিয়ে আমজনতার আক্ষেপ মিটেছে তো বটেই, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই কলকাতার কপালে জুটে গিয়েছে মরশুমের শীতলতম দিন। ভাগ্য ভাল থাকলে তাপমাত্রা নামতে পারে দশের কোটায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.