ধীমান রায়, কাটোয়া: ত্রিকোণ প্রেমের পরিণতি মর্মান্তিক মৃত্যু। মুর্শিদাবাদের সালার স্টেশন অদূরে সুদীপ ঘোষ (১৯) নামে এক কলেজ পড়ুয়ার ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার করল কাটোয়া জিআরপি৷ ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে ওই পড়ুয়া আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অনুমান রেল পুলিশের। মৃতের ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয়েছে দু’পাতার সুইসাইড নোট৷ একটিতে তার প্রেমিকার উদ্দেশ্যে কিছু কথা লিখে গিয়েছেন৷ আর অন্য পাতায় জেঠতুতো দাদাকে লিখে গিয়েছেন, ‘দেবু দা তুমি তোমার ভাইয়ের কষ্টটা বুঝবে। ওরা দু’জনে মিলে আমাকে বাঁচতে দিল না৷’
দাদার উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে সুদীপ জানিয়ে গিয়েছেন, তাঁর স্মার্টফোনে কল রেকর্ডিং-সহ তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এমনকি ফোনের পাসওয়ার্ড কিভাবে খুলতে হবে তা নক্সা করে দেখিয়ে দিয়েছেন সুদীপ। কাটোয়া জিআরপি দেহ উদ্ধারের পর বুধবার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে দেহটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে৷ মৃতের বাবা তপন ঘোষ জানিয়েছেন, এনিয়ে কেতুগ্রাম থানায় তিনি অভিযোগ দায়ের করতে চলেছেন৷
কেতুগ্রামের হলদিগ্রামে বাড়ি সুদীপ ঘোষ৷ ছোটভাই কাটোয়া ভারতী ভবন স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। বাবা তপনবাবু কৃষিজীবী। মা নির্মাণীদেবী গৃহবধূ। সুদীপ কাটোয়া কলেজের বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কলেজ হোস্টেলেই থাকতেন। জানা গিয়েছে, সুদীপের মামাবাড়ি সালারের কাছে সিশুয়া গ্রামে। প্রায়ই মামাবাড়িতে যেতেন সুদীপ ও তার ভাই। ভাই সন্দীপ ঘোষ জানিয়েছেন, শিশুয়া গ্রামের থেকে কিছুটা দুরে রাওতরি গ্রামের এক সমবয়সী যুবতীর সঙ্গে তার দাদার প্রায় এক বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই মেয়েটি কাটোয়া কলেজেরই বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কাটোয়া শহরে ঘরভাড়া করে থাকেন। সন্দীপ বলেন, দাদার সঙ্গে প্রেম চলাকালীন কাটোয়ার এক বিএডের ছাত্রের সঙ্গে ওই মেয়েটির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেয়েটি যদিও দু-নৌকায় পা দিয়েই চলত। কিন্তু দ্বিতীয় প্রেমিক মাঝেমধ্যেই দাদাকে ফোনে হুমকি দিত৷
সন্দীপের অভিযোগ, এই টানাপোড়েনের জেরে তার দাদা প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলেন। তারও পর গত সোমবার কাটোয়া শহরেই সুদীপকে সামনে পেয়ে মারধর করে বিএডের ওই ছাত্র। সন্দীপ বলেন, ‘সেকথা ফোনে বাড়িতেও জানিয়েছিলেন দাদা। বাড়ির সকলে দাদাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম। বলেছিলাম, ওই মেয়েটিকে মনেপ্রাণে ত্যাগ করে দিতে। কিন্তু দাদা তা পারেনি।’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে কাটোয়া থেকে ট্রেন ধরে মামাবাড়ি গিয়েছিলেন সুদীপ। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর মামাবাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসেন ট্রেন ধরবে বলে৷ তবে, তার আগে ফোনে বাবাকে ডেকেছিলেন। বিকেলে বাবা তপনবাবু সালারে হাজির হন। তবে, তার সঙ্গে ছেলের দেখা হয়নি। বিকেল থেকেই টানা ফোন করে যাওয়া হয়। ততবারই ফোনের সুইচ অফ বলে জানা যায়। সালার স্টেশনের আশপাশে খোঁজাখুজির সময় জিআরপি তাঁদের জানায়, একটি দেহ রেললাইনের ওপর থেকে উদ্ধার হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেহটি শনাক্ত করেন তপনবাবু।
মৃতের ভাই জানিয়েছেন, জেঠতুতো দাদা দেবু ঘোষ সিকিমে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তার সঙ্গে সুদীপের ছিল বন্ধুর মতন সম্পর্ক। জীবনের শেষ চিঠিটা ওই দেবুদাকেই লিখে গিয়েছেন সুদীপ। জানিয়েছেন, দিয়ে গিয়েছেন মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড। তবে বুধবার বিকেল পর্যন্ত মোবাইল ফোনটি খুলে দেখার সময় হয়নি পরিবারের সদস্যদের। কাটোয়া শ্মশানেই সুদীপের দেহ সৎকার করা হয়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.